হেফাজতের ইসলামের হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ত্রাস চালানো হয়েছে, তার পেছনে মাদ্রাসা ছাত্রদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সন্দিহান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার সন্দেহ এসবের পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর হাত থাকতে পারে।
শুক্রবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি নানা স্থাপনা এমনকি থানা ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে হামলা চালায় হেফাজত কর্মীরা।
রোববারের হরতালে তাদের আক্রমণ ছিল আরও ব্যাপক। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণঞ্জ অংশে সহিংসতা ছিল ব্যাপক।
সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত মহাসড়কে দিনভর ৫০টিরও বেশি গাড়ি ভাঙচুর, বেশ কয়েকটিতে দেয়া হয়েছে আগুন।
হেফাজতে ইসলামের তিন দিনের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পুড়িয়ে দেয়া রেলস্টেশন। ফাইল ছবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার সব স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে আগুন। হামলা হয়েছে জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, পুলিশের অবস্থানসহ অন্তত ২০ জায়গায়।
সোমবার এসব ঘটনা নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন জাফরুল্লাহ। জামায়াত থেকে বের হয়ে এসে গঠন করা নতুন দল এ বি পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ওই আলোচনায় তিনি বলেন, “অনেকেই বলছে, জনগণ থানায় আক্রমণ করেছে, সরকারি অফিস আদালতে আক্রমণ করছে। এটা কি রকম ব্যাপার? এর কারণটা কী? এগুলো আর গাড়িঘোড়া পোড়ানোর আমি বিরোধিতা করি। কিন্তু এটা কি তারা (হেফাজতে ইসলাম) পুড়িয়েছে? না ‘র’ পুড়িয়েছে সেটার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন আছে।”
আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়। ফাইল ছবি
হেফাজতের হামলার পর পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, তারা হত্যার শিকার মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই যে যারা মারা গেছেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেন।
‘আমার মতে, এই বিচারের দায়িত্ব মেরুদণ্ডহীন বিচারপতিকে দিলে হবে না, তার সঙ্গে আরও দুজনকে দেয়ার প্রস্তাব করছি। সৎ ব্যক্তি হিসেবে যারা সুপরিচিত তাদের দায়িত্ব দেন।’
আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আজকের পত্রপত্রিকায় পড়লাম স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ১৪ জন মারা গেছে। আর হেফাজত ইসলাম বলছে মোট ১৭ জন মারা গেছে। একটা স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে সরকারের গুলিতে ১৭ জন মানুষ মারা গেছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। ফাইল ছবি
‘এর থেকে বড় কলঙ্ক এই জাতির আর কী হতে পারে? সবাই প্রতিবাদ করছে। যার জন্য এই প্রতিবাদ করছে, তাদের কিছু যায় আসে না। আমি বহুবার বলেছি সরকারের কোনো দয়ামায়া নাই।’
হেফাজতের তাণ্ডব নিয়ে কিছু উল্লেখ না করে সরকারের এই কট্টর সমালোচক বলেন, ‘এরা (হেফাজতে ইসলাম) নাড়িয়ে দিয়েছে সব কিছু। সরকারের সমস্ত ক্ষমতার ভিতকে কাঁপিয়েছে। এই কাঁপুনি যেন না থামে এ জন্য আমাদের কিছু শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এখন সময় সরকারকে জবাব দিয়ে দেয়ার।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম থেকে পদত্যাগকারী রেজা কিবরিয়া, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী দিলারা চৌধুরী, এ পি পার্টির নেতা এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, মজিবুর রহমান মঞ্জু, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম।