দল থেকে নিখোঁজ দাবি করা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়কে র্যাব আটক করেছে বলে বাহিনীটি থেকে জানানো হয়েছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারের বাসা থেকে নিপুণকে আটক করা হয়। র্যাব থেকে জানানো হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে সরাসরি নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রোববারের হরতালে নিপুণ রায় চৌধুরী রাস্তায় গাড়ি পোড়াতে নির্দেশ দেন দলীয় নেতা-কর্মীদের।
‘কেরানীগঞ্জের স্থানীয় বিএনপির নেতা আরমান, খোরশেদ ও শাহিনকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাসে বা যেকোনো যানবাহনে আগুন লাগিয়ে ভিডিও করে তাকে পাঠাতে। তার নির্দেশনায় শাহিন একটি বাসে আগুন লাগিয়েছে। আরমান ও খোরশেদ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে ছবি তুলে নিপুণকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দলীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠানোর উদ্দেশে তিনি গাড়ি পোড়ানোর ছবি চেয়েছেন। এসব অভিযোগেই বিকেলে তাকে র্যাব-২ গ্রেপ্তার করে। তার নির্দেশনা পালনকারী কেরানীগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতা আরমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সন্ধ্যায় বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাদের দলের কার্যনির্বাহী সদস্য নিপুণ রায়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলেও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘নিপুণ রায় চৌধুরীকে তার ঢাকার রায়েরবাজার বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী বেশ কয়েকজন বিনা ওয়ারেন্টে আটক করে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন থানা এবং ডিবি অফিসসংশ্লিষ্ট স্থানে খোঁজখবর নিলেও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
আর বিকেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেন তার শ্বশুর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্যের বরাতে দলটির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির নিউজবাংলাকে জানান, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার সময় রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকার বাসা থেকে পুলিশ নিপুণকে আটক করে।
‘দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নিপুণ রায়ের শ্বশুর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, তার পুত্রবধূকে সাড়ে ৩টার সময় পুলিশ বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায়। কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। কোন থানার পুলিশ আটক করেছে তাও নিশ্চিত করা যায়নি।’
আরমান-নিপুণের কথোপকথন
আরমান: ও দিদি?
নিপুণ: আরমান ভাই, এলাকাতেই তো আছেন তাই না? কালকে তো হরতাল, একটা কিছু করা যাবে না?
আরমান: কী করতে হবে বলেন?
নিপুণ রায়: ধরায় দেন।
আরমান: ওকে ঠিক আছে।
নিপুণ রায়: শোনেন,
আরমান: হুম
নিপুণ রায়: বাস হোক যেটাই হোক, একদম পুরা, ফুল ধরবে, ফুল ধরবে। একটু দূর থেকে ভিডিও ছবি আমারে পাঠাবেন, অবশ্যই, অবশ্যই। ঠিক আছে…আমি কিন্তু জায়গামতো পাঠাব। হ্যাঁ, ওইটা মাথায় রাখবেন। ঠিক আছে, আজকেই আজকেই।
আরমান: ওকে।
নিপুণ রায়: বের হন।
আরমান: ইনশাল্লাহ্।
নিপুণ রায়: এটা আমি চাই। একদম দাউ দাউ।
এরপর পরবর্তীতে আরেকটি ফোন কলে শোনা যাচ্ছে। আরমান ফোন করে নিপুণ রায়কে বলেন-
আরমান: ভিডিও করতে পারিনি। ছবি পাঠিয়েছি। লীগের লোকজন ঘেরা। পুলিশ ঘিরে রেখেছে।
নিপুণ রায়: ওকে সরে দাঁড়ান।
আরমান: সরে গেছি গা।
নিপুণ রায়: হোয়াটস অ্যাপে পাঠান।
আরমান: হুম, হোয়াটসঅ্যাপেই পাঠাইছি।
শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপদ মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। যাত্রীরা তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে আহত হলেও কোনো হতাহত হয়নি। পুলিশের ধারণা, নিপুণ রায়ের এ নির্দেশনার পরই মূলত বাসে আগুন দেয়া হয়েছে।