দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা সহিংস হরতালে ত্রাসের পর নিজেদের হতাহত নেতা-কর্মীদের আত্মার মাগফিরাত এবং সুস্থতা কামনা করে সোমবার দোয়া দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
রোববার পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানান হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম। বলেন, ‘আমরা আগামীকাল গত কয়েকদিনে মারা গেছেন তাদের দোয়া কর্মসূচি পালন করছি। বাদ আসর বায়তুল মোকারারাম মসজিদের পূর্ব গেটে ওই কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া আগামী ২ এপ্রিল আমরা সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। জোহরের নামাজের আগে ও পরে এ কর্মসূচি হবে।’
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
০১. তাদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
০২. আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ও নিহতের পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে।
০৩. গ্রেপ্তার হেফাজতের কর্মীদের মুক্তিসহ এসব ঘটনায় কোনো ধরনের হয়রানি মামলা করা যাবে না।
এই দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকার কিংবা কোনো দলের প্রতিপক্ষ নই। কোনো দলের বিরুদ্ধে নই।’
হেফাজতের হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তাতে নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে হেফাজতে ইসলাম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
রোববার হেফাজতের হরতালে ঢাকার কেন্দ্রস্থল শান্ত থাকলেও তাদের কর্মীরা সহিংস হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। গত শুক্রবার, শনিবারও চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
হেফাজতের মহাসচিবের দাবি হরতালে তারা কোনো সহিংসতায় জড়াননি। বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। ভবিষ্যতে আমরা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব। কিন্তু আমাদের অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়া শর্তেও কেন হেলমেটবাহিনী, যুবলীগ-ছাত্রলীগ মসজিদে হামলা করবে। এটা প্রকাশ্যে বোঝা যায় তারা দ্বীনের শক্র।’
হেফাজতের হরতালে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়। সেখানে অনেক সরকারি স্থাপনায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে রেল চলাচলে। হরতালের আগের দিনও জেলাটিতে সসিংসতা ছড়ায় হেফাজতের কর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের খণ্ডচিত্র। ছবি: নিউজবাংলা
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একটি মাদ্রাসা বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সেখানে কিছু পরীক্ষার্থী খুবই স্বল্প সময়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দিবস উপলক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শেষে তারা হলে ফিরে গেছে। কোন ধরনের উত্তেজনা- অপ্রতিকর ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।
‘এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেছেন। এরপর তারা প্রধান সড়ক থেকে গলি পর্যন্ত দিয়ে তারা মাদ্রাসা সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সেখান থেকে ইট পাটকেল ছোড়া হয়েছে। এভাবে মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর তারা চড়াও হয়েছে।’
মামুনুল বলেন, ‘স্থানীয় জনসাধারণ এ দৃশ্য দেখে বিক্ষুদ্ধ হয়েছে তখন এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এসেছে। তখন সরকারী দলীয়রা আক্রমণ করেছে। তখন মাদ্রাসার ছাত্ররাও এলাকাবাসীর সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। এরপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি করেছে।’
সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিন রাজধানী ও আশপাশের এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা দেখা গেছে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকায়। পুরো এলাকাটিই হেফাজতের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। যান চলাচলা স্বাভাবিক করতে পুলিশ ও বিজিবিকে অ্যাকশনে যেতেও দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের সড়কে টহলরত বিজিবির সাঁজোয়া যান। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সাইবোর্ড এলাকায় হাজার হাজার মানুষ এসে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল বলে জানালেন মামুনুল। বলেন, ‘রাস্তা থেকে তাদের হটানোর তাগিদে গুলি চালানো হয়েছে। বিনা উসকানিতে এ ঘটনা ঘটেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল দাবি করেন কয়েকদিনে মোট ১৭ জন হেফাজতের কর্মী নিহত হয়েছেন।
রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ‘নজিরবিহীন’ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নজিরবিহীন একটি হরতাল বাংলাদেশে পালিত হয়েছে। কোন মহাসড়কে গাড়ি চলেনি। সারাদেশের সকল জেলা রাজধানী থেকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিল। এ হরতাল স্বতঃস্ফূর্ত ছিল।’