ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এই কর্মসূচিতে সবার সমর্থন দেয়া উচিত।
শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের পর পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের প্রাণহানির প্রতিক্রিয়ায় শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার হরতাল ডাকে হেফাজত।
আগের দিনের সহিংসতার পর শনিবারের কর্মসূচিতে হেফাজত কর্মীরা ছিলেন অনেকটাই শান্ত। তবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী পরিষদের ডাকা কর্মসূচিতে জাফরুল্লাহসহ বক্তারা তীব্র সমালোচনা করেন সরকারের। তাদের দাবি, হেফাজত কর্মীরা ছিল শান্ত।
হেফাজতের হরতাল নিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘হরতাল ডাকা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদের সেই শান্তিপূর্ণ হরতালে আপনারা বাধা দেবেন না। আমি মনে করি, আমাদের সবারই উচিত এই হরতালকে সমর্থন করা।’
আগের দিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরকার-সমর্থকদের সংঘর্ষের পর হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ব্যাপক সহিংসতা দেখায়।
হাটহাজারীরে হেফাজতের সদর দপ্তরের কাছের মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করে কর্মীরা সরকারি ডাকবাংলো, স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও পরে থানায় হামলা করে।
থানায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর গুলি করতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রেলস্টেশন পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাম্পে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন পুলিশের গুলিতে একজনের প্রাণহানি হয়।
কওমি ছাত্রদের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশনের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলাটি।
তবে জাফরুল্লাহ হেফাজত কর্মীদের এসব ঘটনাকে দেখছেন প্রতিবাদ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা যাদের ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছেন, সেই হেফাজতই আজ প্রতিবাদ করছে। আপনার পার্টির লোকেরাও আপনার সামনে এসে কথা বলতে ভয় পায়, তবু তারা প্রতিবাদ করেছে। কীভাবে? আপনি স্মরণ করুণ।’
চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত এই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, ‘হেফাজতের এই যে সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা। এরা যারা মারা গেছেন, তাদের ভারত পাকিস্তানি কায়দায় নতুন প্রজন্মকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন। এই যে হত্যা করেছেন, তাদের শহিদের মর্যাদা দেবেন। হাশরের দিন আপনি কী উত্তর দেবেন, সেই উত্তর তৈরি করেন।’
সমাবেশ চলাকালে আশপাশে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটকও করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ একটা সমাবেশ। পুলিশ ভাইদের কাজ হলো শান্তি রক্ষা করা। এখানে কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতা নেই। তাই আপনারা আইনশৃঙ্খলার জন্য চুপচাপ দাঁড়ায় থাকেন। তাই আপনারা এখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যাবেন না।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, স্বাধীনতার উৎসবকে মোদি এবং সরকারি দলের উৎসবে পরিণত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার এবং ৩০ লাখ শহিদের সঙ্গে বড় ধরনের অবমাননা করা হয়েছে। সরকার বাইতুল মোকাররম ও চট্টগ্রামে এই ২৬ মার্চে রক্ত ঝরিয়েছে।’
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে এই বাম নেতা বলেন, ‘তিস্তার পানির বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির কোনো কথা নেই। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে কি না, এ রকম কোনো কথা নেই। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এমন একটি ফাঁদ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে কোনো দুর্যোগ হলে মানুষ ভারতে যেতে পারবে না। সেই নরেন্দ্র মোদি সরকার কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু হয়?’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুও এ সময় বক্তব্য রাখেন।