মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিষয়ে নীরবতা পালন করে বিএনপি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে একটি কথাও বলেনি। এ বিষয়ে তাদের ন্যক্কারজনক নীরবতা পাকহানাদারদের পক্ষে তাদের অবস্থানকে স্পষ্ট করে।
জাতি এখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। এমন সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন নিয়ে বিএনপির মুখে কিছুই শোনা যায় না। তারা শুধু সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নেয়া কর্মসূচি বাতিলের কারণে দলটির সমালোচনা করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছিল, ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে তারা তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
‘২৬ মার্চ সামনে রেখে ইতিহাসের অনেক মীমাংসিত সত্যের মুখে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে বলেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।’
বুধবার দলের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিজেদের সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়ংকর ও বিপজ্জনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি, বিদেশি মেহমানদের স্বাগত জানানো, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপির গৃহীত সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনায় ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘২৫ মার্চের গণহত্যা সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে। ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী, পুরুষ, শিশুকে হত্যা, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা সৃষ্টি করেছিল সে বর্বর ইতিহাস।
‘নিষ্ঠুরতার দিক দিয়ে যা আর্মেনিয়া, নাৎসি, কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডার গণহত্যাকে অতিক্রম করে গেছে। অথচ ইতিহাসের এ বর্বরোচিত গণহত্যা এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। স্বাধীনতার এত বছর পর পাকিস্তান একাত্তরের নৃশংস বর্বরোচিত গণহত্যার জন্য আজও ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশ হিসেবে পাকিস্তানের কাছে আমাদের যা পাওনা ছিল তাও তারা আজ পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়নি। এত বছর পরও তারা তাদের নাগরিকদের আমাদের ওপর বোঝা করে রেখেছে। এ দেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়নি।
‘পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেয়। স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। পরে খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। একাত্তরের গণহত্যায় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেন।’
ইতিহাসকে শুদ্ধ করতেই মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংগ্রাম শুরু হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেই সংগ্রামের পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন।’
একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।