বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন৷ কিন্তু ছাত্রলীগের বাধায় তা পারেনি সংগঠনটি।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) দাহের জন্য তৈরি করে রাখা মোদির কুশপুত্তলিকা কেড়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও কুশপুত্তলিকা দাহের কর্মসূচি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সকাল থেকে তাদের নেতা-কর্মীরা টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন এবং নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা বানিয়ে টিএসসিতে রাখেন তারা।
অন্যদিকে বেলা ৩টায় ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলে ‘যোগদানের’ জন্য সকাল থেকে রাজু ভাস্কর্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ হাসানের নেতৃত্বে কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।
ফেডারেশনের কর্মসূচি শুরুর আগেই টিএসসিতে রাখা মোদির কুশপুত্তলিকা কেড়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা বাধা দিলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ‘চুপ’ থাকতে বলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরা তার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর কর্মসূচি দেই। সে লক্ষ্যে আমরা একটি কুশপুত্তলিকা তৈরি করে টিএসসির গেটে রাখি। তখন রাজু ভাস্কর্য থেকে ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন কর্মী এসে কুশপুত্তলিকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘কুশপুতুল নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ছাত্রলীগ ভারতে নরেন্দ্র মোদির করা সকল অপকর্মের সমর্থন দিয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করেছে, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তীব্র সাংঘর্ষিক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
কুশপুতুল নিয়ে গেলেও ছাত্র ফেডারেশন তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি টিএসসি থেকে শুরু করে। পরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নিচে সমাবেশ করে। সেখানেই তারা নরেন্দ্র মোদির ছবি পোড়ায়।
কুশপুতুল কেড়ে নেয়ায় পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি পোড়ায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলাবঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসছেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরে আসার কথা ২৬ মার্চ। এবারের সফরে প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকার বাইরেও যাবেন মোদি। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর পরিদর্শন করবেন সেখানকার ওড়াকান্দি ও সাতক্ষীরায় দুটি মন্দির।
তার এ সফর ঠেকাতে বিক্ষোভ করছে ইসলামপন্থি কয়েকটি সংগঠন। একই দাবিতে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে কয়েকটি বাম সংগঠনও। দুই পক্ষই ভারতীয় সরকারপ্রধানের সফর ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে।
গত জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে কয়েক হাজার মুসল্লি। বিক্ষোভ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘যদি মোদিকে আসতে দেয়া হয়, তাহলে আমরা সবাই সন্ত্রাসে পরিণত হব। বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান।’