বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার কোনও নির্দেশনা ছিল না বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেছেন, এটি ছিল পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ভাষণ।
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ফোরাম আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ, জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সংগঠনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘৭ মার্চ জনগণ ও ছাত্র সমাজ এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অর্থাৎ দেশবাসীকে বোঝাতে চেয়েছেন, আমি আন্দোলন ও সংগ্রামে আছি, তোমরা প্রস্তুত হও।
‘পাশাপাশি পাকিস্তানকে বুঝিয়েছেন, এখনও সময় আছে পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে অথবা আমাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। অর্থাৎ ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার কোনও নির্দেশনা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে আজকের যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সময় ও পরে যে আওয়ামী লীগ এসেছিল তারা কি আসলে মুক্তিযুদ্ধ চেয়েছিল? সে সময় তারা মুক্তিযুদ্ধ চায়নি। সে সময় আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করেছিল।
‘সেই জন্য আওয়ামী লীগ ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত চেয়েছিল পাকিস্তানকে কীভাবে সংঘবদ্ধ রাখা যায় এবং আওয়ামী লীগ চেয়েছিল কীভাবে তারা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে যেতে পারে। কিন্তু ছাত্রসমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে এমনভাবে সম্পৃক্ত করেছিল যে আওয়ামী লীগ চাইলেও সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই।’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘২৫ মার্চ ঢাকায় ক্র্যাকডাউন হয়েছে এবং চট্টগ্রামেও গণহত্যা হচ্ছিল, তখন জিয়াউর রহমান তার সিনিয়রকে গ্রেপ্তার ও হত্যা করে সেখানেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন একটা সরকারের বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তার বাসায়। আওয়ামী লীগ যদি স্বাধীনতার ঘোষণাই দিত, তাহলে তাজউদ্দীনের মাধ্যমেই দিত। তাই এসব কথা বলে লাভ নেই।
‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে নাই। গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে বাকশাল করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমরা। কিন্তু যুদ্ধের পরে আমরা কি দেখলাম? মুক্তিযুদ্ধের ফল তো জনগণ পাচ্ছে না। শুধু একটা জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ করিনি। একটা দেশের আপামর জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ করেছি।
আজ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, তখন দেশে চাল, তেল, লবণ ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, ‘এত বছরে আওয়ামী লীগ এমন কোনো কাজ করে নাই যে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে। কিন্তু বিএনপি সেটা পারবে।
‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে, বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে। এটাই ইতিহাস, বিএনপি কখনও গণতন্ত্রকে হত্যা করে নাই। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়নি। দেশে দুর্ভিক্ষ আনেনি, বাকশাল কায়েম করে নাই। বিএনপি সব ফিরিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ আবার সব কেড়ে নিয়েছে। এটাই সত্য ইতিহাস।’