বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতাহাতি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সাউন্ড বক্স চালু ও বন্ধ রাখা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ চড়াও হন। পরে তা হাতাহাতিতে গড়ায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জুবায়ের আহমেদ বলেছেন, তার ওপরই হামলা করা হয়।
ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সোহানের অভিযোগ, জুবায়ের ও তার কর্মীদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আহত হন।
জানা গেছে, আহত সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
সাদ্দাম হোসেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছেন তারা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে স্বাগত জানাতে শুক্রবার বিকেলে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৷
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে এই আনন্দ মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কর্মসূচি সফল করতে ঢাকার বিভিন্ন ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা জমায়েত হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানেই বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
এ কারণে সেখান থেকে আর আনন্দ মিছিল হয়নি। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশের পর আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষ হয় শহিদ মিনারে গিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাউন্ড সিস্টেম চালু ও বন্ধ রাখা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঘটনার সূত্রপাত।
তারা জানান, আনন্দ মিছিলের জন্য প্রস্তুত করা সাউন্ড বক্সে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট গান-কবিতা বাজানো হচ্ছিল। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কয়েকজন কর্মী এসে সাউন্ড বক্স কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করতে বলেন। ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাউন্ড বক্স বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানানো তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
ঢাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, হাতাহাতির এক পর্যায়ে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ ঢাবি ছাত্রলীগ কর্মী সাফওয়ানের গায়ে হাত তোলেন। সাফওয়ানকে বাঁচাতে কয়েকজন ছুটে গেলে জুবায়ের আহমেদ তার কর্মীদের নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগকর্মীদের কিল-ঘুষি দিতে থাকেন৷
তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের ৪-৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তারা সাউন্ড বক্স অপারেটর ফরহাদ ও হাসানের ওপরও হামলা করে।’
সোহান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা ১০-১৫ জন ছিলাম। তারা শতাধিক ছিল ৷ আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করেই তারা ক্ষ্যান্ত হননি; সাউন্ড বক্সগুলোও নিচে ফেলে দেয়।’
ঢাবি ছাত্রলীগ কর্মী সাফওয়ান চৌধুরী বলেন, ‘অন্য কোনো ইউনিটের কর্মীদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটলে আমরা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিতাম৷ কিন্তু যখন একটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আমাদের গায়ে হাত তোলেন তখন সে ঘটনা ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জুবায়ের আহমেদ আমাদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা করে। আমাদের কয়েকজনকে ফ্লাইং কিক দেয়া হয়। তারা সাউন্ড সিস্টেমও নষ্ট করেছে। পরে সাদ্দাম ভাইকে নিয়ে আমরা মিনারের এক পাশে অবস্থান নিলে সেখানেও আমাদের মারতে আসে জুবায়ের আহমেদ ও তার কর্মীরা।’
তবে জুবায়ের আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনা উল্টোটা। আমরা কিছুক্ষণের জন্য সাউন্ড বন্ধ করতে বললে ঢাবি ছাত্রলীগকর্মীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারা আমাকেও আহত করে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কর্মীরা চাচ্ছিল সাউন্ড বক্স বন্ধ করে স্লোগান দিয়ে কর্মীদের উদ্দীপনা দিতে। সে জন্য তারা কিছুক্ষণের জন্য সাউন্ড বক্স বন্ধ করতে বললে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা বাধা দেয়। পরে তারা আমার কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমি কর্মীদের বাঁচাতে গেলে তারা আমার ওপরও হামলা করে।’
জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের প্রোগ্রামগুলোতে আমরা সবসময় সহযোগিতা করি। তাই বলে এভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হলো। এতে আমাদের দুঃখ পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা করেছে সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলাকারীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা ভালোভাবে খোঁজ নিচ্ছি। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’