সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু গ্রামে হামলার ঘটনায় ‘মুখ না খোলায়’ আওয়ামী লীগ নেতাদেরও সমালোচনা করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ সমালোচনা করেন তিনি।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে জড়িত সবার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে’ এ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। একই দাবিতে এর আগে মধুর ক্যানটিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা ৷ মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখলাম না সুনামগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলতে ৷ আমরা কি ধরে নেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেও সাম্প্রদায়িক লোকজন ঢুকে গেছে? আওয়ামী লীগে কি একটি অসাম্প্রদায়িক নেতাও নেই যে এ বিষয়ে কথা বলবে?
‘ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের চেয়েও অনেক প্রাচীন সংগঠন৷ আমরা সব সংগঠনের ভুল ধরতে পারি ৷ আমরা কোনো ভুল করি না।’
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সমর্থকরা বুধবার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দুবাড়ি। এসব ঘর থেকে টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় তারা।
আরও পড়ুন: হেফাজত জড়ো মসজিদের মাইকে, পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
সমাবেশে সুনামগঞ্জে হামলার প্রতিবাদ যারা করেনি তাদের জন্ম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সনজিত। বলেন, ‘যারা সুনামগঞ্জের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ করেনি তাদের জন্ম নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে৷ কারণ যারা এই সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে রয়েছে, তাদের যারা মৌন সমর্থন দেয় তারাও এই হামলার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে ৷’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশে
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মোদিবিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ৯টি ছাত্রসংগঠন।
এ সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: ‘জীবন বাঁচানির লাগি হাওরও আশ্রয় নিছি’
সমাবেশে সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘কালকে তোদের সঙ্গে দেখা হবে৷ তোদের কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলা হবে ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দেখে নেবে কেমনে তোরা কালকে সমাবেশ করিস।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, তখন বাম সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের পাঁয়তারা করছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলো এখন জামাত-শিবিরের এজেন্ট। তারা কালকে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করবে।
‘আমরা তোদের ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, ৯টি নয় তোদের ৯০ হাজার সংগঠন এসেও যদি রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করতে পারিস আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করব না৷ আমরা ১০ জন আদর্শের শক্তি দিয়ে তোদের ১০ হাজার জনের সঙ্গে লড়ব ৷ তোরা সীমা লঙ্ঘন করিস না। পিঠের চামড়া কিন্তু কারও থাকবে না।’
আরও পড়ুন: হিন্দু গ্রামে হামলা, দায় এড়াচ্ছেন হেফাজতের মামুনুল
ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আজ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব৷ আমরা দেখব কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতাবিরোধী প্রোগ্রাম দেয়।’
সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, যখন সুনামগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটে তখন এই বাম সংগঠনগুলো নীরবতা পালন করে। অথচ আরেক দেশের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে তাদের উচ্চকিত হতে দেখা যায়।আরও পড়ুন: শাল্লায় হামলার পর র্যাব-পুলিশের অভয়
সাদ্দাম বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ সুচারুরূপে উদযাপন করা নাগরিক হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই নৈতিক দায়িত্ব যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করতে চায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর জবাব দিতে রাজপথে প্রস্তুত রয়েছে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুদ্দিন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বাঁধন, নাজমুল হক সিদ্দিকি নাজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান ও জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস।