স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদিবিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ৯টি ছাত্রসংগঠন।
শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ হবে৷
বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে মােদির আগমনের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতারা এ ঘোষণা দেন।
ওই সময় ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় মশাল মিছিল কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। মােদির আগমনের প্রতিবাদ জানানাে ন্যায়সঙ্গত অধিকার; বরং ভারতের দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক মােদিকে সুবর্ণজয়ন্তীতে আমন্ত্রণ জানানাে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। এই মােদির হাতে এখনাে গুজরাটের হাজার হাজার মানুষের রক্তের দাগ লেগে আছে।
‘আমাদের দেশের শাসকগােষ্ঠী কথায় কথায় ভারতকে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায়ই ভারতের বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের জনগণকে হত্যা করছে। এসব হত্যার কোনাে বিচার হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ এখনাে পায়নি।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার যে বাংলাদেশ, সে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক মােদির অংশগ্রহণ, গৌরবােজ্জ্বল সে ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা তা হতে দিতে পারি না।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ মার্চ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিজেপি নেতা নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ নিয়ে সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার সফর বিজেপি নেতা হিসেবে নয়, তিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।’
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সংবাদ সম্মেলনে ভারতের জনগণকে বন্ধু দাবি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ভারতের শাসকগােষ্ঠীর বিরােধিতা, আগ্রাসনের বিরােধিতার মানে ভারতের জনগণের সঙ্গে বিরােধিতা নয়। ভারতের জনগণ আমাদের বন্ধু। দেশটির জনগণ মােদি সরকারের জনবিরােধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
‘আমরাও আমাদের দেশের শাসকগােষ্ঠীর জনবিরােধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। ফলে ভারতের জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন থাকবে।’
ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে ছাত্রনেতা ফয়েজ বলেন, ‘বিবেকবান মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মােদির আগমনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অনুরােধ উপেক্ষা করে যারা কর্মসূচি পালন করবে, তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর হাতে দমনেরও হুঁশিয়ারি দেন।
‘বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্র বানানাের আয়ােজন ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। মতপ্রকাশের অধিকার, মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কোনাে অজুহাতেই সে অধিকার খর্ব করা চলবে না। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের জনগণের অধিকারবিরােধী নির্দেশনা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
এ সময় বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভারতীয় আগ্রাসন ও মােদির আগমনের বিরুদ্ধে সােচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি জাহিদ সুজন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিক অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিনসহ আরও অনেকে।