সুবর্ণজয়ন্তীতে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পাকিস্তানের মতো আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া, টিক্কা খানরা যেমন আচরণ করেছেন, এখন তেমন আচরণ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে এক দোয়া মাহফিলে এমন মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত কোনো মিছিল-মিটিং করতে দেবে না সরকার। এই গোটা সময়টাতে মানুষ র্যালি করবেন, কেউ আলোচনা সভা করবেন। কিন্তু তারা সব বন্ধ করে দিল। আওয়ামী লীগ যে চেতনার কথা বলে, তার সঙ্গে স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই।
‘সম্পর্ক নেই বলেই ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সব সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এটাই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজ।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার মূল কথা হচ্ছে, মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা। মানুষ তার কথা বলবে নির্ভীক চিত্তে, এই নিশ্চয়তা দেয়া। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইয়াহিয়া, টিক্কা খানরা যে কাজ করেছিলেন, গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে হানাদার বাহিনী যে পৈশাচিকতা করেছিল, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি আচরণ মিলে যায়।
‘হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা, নারী নির্যাতনসহ যা কিছু করেছে, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সবকিছু মিলে যায়। ওদের আত্মা হচ্ছে ইয়াহিয়া খানের আত্মা, ওদের আত্মা টিক্কা খানের আত্মা। ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না; মানুষের নাগরিক অধিকার বিশ্বাস করে না। তাই তারা ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ সবকিছু বন্ধ করেছে।’
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানান বিএনপির নেতা।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন ২৫, ২৬ মার্চ বাঙালিদের হত্যা করেছেন। এটা শুধু মিথ্যা নয়; এটা জলজ্যান্ত অপপ্রচার।’
স্মরণসভায় রিজভী বলেন, ‘খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ফুলটাইম রাজনীতিবিদ। আমাদের অনেকেই আছেন পার্টটাইম রাজনীতিবিদ; পার্টটাইম ব্যবসায়ী।
‘কিন্তু তিনি ছিলেন ফুলটাইম রাজনীতিবিদ। নেতা-কর্মী ও জনগণের সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরি হওয়ার ব্যক্তিত্ব হলেন খোন্দকার দেলোয়ার।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন এই ধরনের গুণী রাজনীতিবিদ হারাচ্ছি। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে হারালাম, ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহকে হারালাম; সর্বশেষ হারালাম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে।
‘এই ধরনের মানুষ হারিয়ে আমরা কাদের পাচ্ছি? আমরা পাচ্ছি পাপুলকে, খালেদকে, সম্রাটকে। এরা রাজনীতিবিদ? এই যে রাজনীতির অধঃপতন, এটা সরকার সৃষ্টি করেছে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় বিএনপির কেউ কেউ জড়িত বলে সরকারি দলের লোকজনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, ঘটানোর পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, সবাই আওয়ামী লীগের। সেটা আওয়ামী লীগেরই সরকার। তখন বিএনপি ছিল না। এখন যারা বিএনপি করে তাদের কেউ সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।’
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন দলের স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমসহ অনেকেই।