ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি সভায় নতুন কমিটির জন্য সম্মেলন করার দাবি জানানোয় হাতিহাতি হয়েছে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা ডাকা হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে।
সভায় উপিস্থত ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নিউজবাংলাকে জানান, সভার এক পর্যায়ে অনেকেই মেয়াদ উত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি ভেঙে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। এ জন্য ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অনুরোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সভার শুরুতে নির্ধারিত বিষয়েই আলোচনা হয়। এর এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সম্মেলন নিয়ে আলোচনার অনুরোধ করেন সহসম্পাদক মেশকাত হোসেন। এর পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান ইমরানও সম্মেলনসহ বেশ কিছু সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় কমিটিতে নতুন করে পদ পাওয়া নোবেল ও ‘চারু সোহাগ’ তাকে বাধা দেন। তখন ইমরান বর্ধিত কমিটিতে অনেক বিতর্কিতকে আনার অভিযোগ করলে হাতাহাতি শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইরমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সভায় আমি ছাত্রলীগের সম্মেলন কবে হবে জানতে চাই। এর আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই সম্মেলনের প্রসঙ্গ ওঠান। আমি সভাপতি- সাধারণ সম্পাদককে বলেছি, আপনারা সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সম্মেলনের বিষয়ে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। নেত্রী কমিটি বহাল রাখতে বললে আমরা মেনে নেব।
‘তখন কমিটিতে নতুন সহসভাপতির পদ পাওয়া নোবেল আমাকে কথা বলতে বাধা দেন ও বসতে বলেন। এ সময় আমি নোবেলের প্রসঙ্গ টেনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বলি, ছাত্রদল করা ছেলেরা কীভাবে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হন?’
ইমরান বলেন, ‘এ কথা বলার সঙ্গেসঙ্গে নোবেল ও কমিটির আরেক নতুন সহসভাপতি সাগর হোসেন সোহাগ (চারু সোহাগ) আমার দিকে ধেয়ে আসেন। এ সময় আমাদের মধ্যে হাতিহাতির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা সবাইকে শান্ত করেন। এরপর সভা আবার শুরু হয় এবং ভালোভাবেই শেষ হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সভায় অনেক নেতাই সম্মেলনের বিষয়টি সামনে আনেন। তারা দ্রুত সম্মেলন দিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন।
তখন ছাত্রলীগ সভাাপতি-সাধারণ সম্পাদক কী বলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বলেছেন, নেত্রী চাইলে অবশ্যই সম্মেলন হবে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সভায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বলেছি, বর্তমানে কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি অনুযায়ী টিম করে সম্মেলনের জন্য নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে যান। নেত্রীর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন। এর পর নেত্রী যা বলবেন আমরা সেটাই মেনে নেব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখকের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই অভিযোগ ওঠে কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দিয়ে রাখা হয়েছে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তানদের। কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অছাত্ররাও।
এছাড়া সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগের বঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এই দুই নেতা। তাদের অব্যাহতির পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
পরের বছর সংগঠনের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।