বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইতিহাস বিকৃতি: আ. লীগ, বিএনপির পালটাপালটি অভিযোগ

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২১ ১৭:২৬

জিয়াকে হত্যার পর থেকে বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠাতাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে আসছে। যদিও উচ্চ আদালতে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। একটি রিট আবেদনের পর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত নানা প্রমাণ উল্লেখ করে বলেছে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক। এর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। যদিও বিএনপি এখনও জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে আসছে। আর এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলেছে।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলাদা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটির নেতারা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও কৃতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয় নাই। একজন আওয়ামী লীগ নেতার কারণেই স্বাধীনতা আসে নাই। সত্যি ইতিহাস হলো, স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আত্মত্যাগের বিনিময়ে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা ৭ মার্চকে অস্বীকার করি না। কিন্তু একমাত্র ৭ মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতা আসে নাই। যিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে এই যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি হলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, এটাই সত্য ইতিহাস। আওয়ামী লীগ যা বিকৃত করে আসছে।’

অন্য একটি অনুষ্ঠানে, ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে যারা ইতিহাস বিকৃতি করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চ থেকে বাঙালি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এই ভাষণের চার লাইনই যথেষ্ট বাঙালিকে স্বাধীনতার দাবিতে উজ্জীবিত করতে।

‘বিএনপি আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে ৭ মার্চ অস্বীকার করত আর এখন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করা শুরু করেছে। জিয়াউর রহমান এদেশের ৯৮ ভাগ রাজনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। ছবি: নিউজবাংলা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আয়োজন নিয়ে রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা চলছে।

বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ঐতিহাসিক এই দিনটিকে এতদিন উপেক্ষা করে এলেও এবার এই দিনে তারা আলোচনা সভা করেছে। যদিও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য তৈরি করেছে বিতর্ক।

১৯৭১ সালের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মার্চের এই দিনটিতে রাজধানীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এই বক্তব্যটিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সূচনার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়।

তবে বিএনপির সেই আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের সমালোচনা করা হয়েছে। দলের নেতারা দাবি করেছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলেননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বিএনপির অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করলেও বিএনপি নেতারা দাবি করেন, ২৬ মার্চ এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি তারা চেপে যান।

জিয়াকে হত্যার পর থেকে বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠাতাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে আসছে। যদিও উচ্চ আদালতে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। একটি রিট আবেদনের পর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত নানা প্রমাণ উল্লেখ করে বলেছে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক। এর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। যদিও বিএনপি এখনও জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে আসছে। আর এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিএনপির ওই বক্তব্যের পরদিন জবাব আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যিনি সম্পর্কে জাতির জনকের মেয়ে।

বিএনপি ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ইঙ্গিত পাননি বলে দলটি যে কথা বলেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির বক্তব্য পাকিস্তানিদের মতোই। তারাও সেদিন কিছু বোঝেনি।

১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ওপর গুলি চালিয়েছেন বলেও পালটা অভিযোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সেই থেকে দুই দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনছেন।

মির্জা ফখরুল যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন সেখানে কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত এক যুগে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃতি করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করেছে। অথচ তারাই স্বাধীনতার পর প্রথম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। এদেশের ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল তারা।

‘আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ঠিক যেমন গত ১২ বছরে এদেশের গণতন্ত্র হত্যা করছে দলটি।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চের ইতিহাস বিকৃতকারীদের জাতি কখনো ক্ষমা করবে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহও বক্তব্য রাখেন। তিনি ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য আলী হাবিবের 'আবার ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র' প্রবন্ধ পাঠ করেন।

প্রবন্ধে ৭ মার্চকে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হয়।

আলোচনায় বিচারপতি শামছুউদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘জিয়া ছিল যুদ্ধাপরাধী। তিনি ২৫ ও ২৬ মার্চ কী করেছিলেন, তা অজানা নয়। তিনি ওই দুই দিন গুলি করে বহু মানুষকে হত্যা করেছিলেন। ’

২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করতে জিয়াকে প্রভাবিত করা হয়েছিল জানিয়ে শামছুদ্দিন বলেন, ‘তিনি ভাষণ পাঠ করতে চাননি। পরে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিলেন। তিনি ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তানিদের মেসেজ পাঠাতেন।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোর্ট মার্শাল করে জিয়ার বিচারের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টিও জানান বিচারপতি মানিক। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ‘প্রহসনের বিচারে’ ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষ কখন ইতিহাস বিকৃতি করে? যখন তার সামনে আর কোনো পথ থাকে না। যখন সে সত্যকে মেনে নিতে পারে না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, ‘এরা কারা যারা ’৭১-এর ইতিহাস বিকৃতি করতে চায়? এদের নিজেদের কোনো ইতিহাস নেই। ২৩ বছরে তাদের নিজস্ব কোনো ইতিহাস নেই।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই দলটি এত দিন ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি, জনপ্রিয় হতে পারেনি বলে তাদের একটাই টার্গেট ইতিহাস বিকৃতি করা।’

সম্প্রীতির বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খর্বাকৃতির জিয়াউর রহমানের তুলনা করা অন্যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর