আটকের পর নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ‘শাবাশ’ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কিশোর যে ‘সাহস’ দেখিয়েছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও সেই ‘সাহস’ দেখানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তাহলেই ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের পতন সম্ভব।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন দলের মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আমি শাবাশ দিতে চাই কার্টুনিস্ট কিশোরকে। তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। তার এই সাহসিকতার জন্য আমি তাকে শাবাশ দিতে চাই। বন্ধুগণ এই সাহস নিয়ে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে সাহস নিয়ে এই অন্ধকারকে দূর করার জন্য, এই স্বৈরাচারকে দূর করার জন্য নেমে আসতে হবে।’
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। ২০২০ সালের ৬ মে গ্রেপ্তার হন এই দুজন।
কিশোর ও তার পরিবারের অভিযোগ, গ্রেপ্তার দেখানোর আগে তাকে ও মুশতাককে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে।
গত ৪ মার্চ জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর অভিযোগ করেন, তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। ১০ মার্চ এই অভিযোগ এনে তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলার আবেদন করে জবানবন্দি দেন।
কিশোরের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত কিশোরের জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। আটকের পর নির্যাতনে কিশোরের কানের পর্দা ফেটে গেছে। আমরা আজ আদালতে হেফাজতে নির্যাতন আইনে মামলা নিতে আবেদন করেছি। এ বিষয়ে পরে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই দখলদার সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করছে যার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে অন্যায়, অত্যাচার নিপীড়নের মাধ্যমে।’
যুবদল নেতা মজনুসহ এই আইনে গ্রেপ্তার সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবিও জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘কার্টুনিস্ট কিশোরের উপর কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, মোশতাক কীভাবে মারা গেছেন তার দুটো ঘটনা মাত্র প্রকাশ পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগ ‘ভয় পাচ্ছে’ দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা এত ভয় পান কেন? সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পরও চতুর্দিক থেকে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের সমাবেশে আসতে দেন না। কারণ আপনারা জানেন নেতা-কর্মী ও জনগণ যদি জেগে ওঠে তাহলে আপনাদের এই বেআইনি ক্ষমতা আর রাখা সম্ভব হবে না...।’
আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার সকল চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়ে আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজ সাহস নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে বন্ধুগণ।
সরকারের পদত্যাগ, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা পাওয়া বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি, দুর্নীতির পাশাপাশি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেয়া, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিও জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এই লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘কোনো কিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।