মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ‘বিরাট বিরাট অবদান’ আছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এক মানুষের কথায় দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা ঠিক নয়।’
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দলটির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত এ সভার বিষয় ছিল ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ‘পল্টনে মাওলানা ভাসানীর জনসভা’।
সভায় আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবশ্যই আপনাদের অবদান আছে। আপনাদের বিরাট বিরাট অবদান আছে। ১৯৭১ সালে আপনাদের যে অবদান, সে অবদান আমরা কেউ কোনোদিন অস্বীকার করি না। কিন্তু একই সঙ্গে যখন মূল নায়কের (জিয়া) অবদানটিকে অস্বীকার করেন সেটাকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাব তুলে নেবে, নিক। কে পরোয়া করে? তিনি খেতাব পেলেন, কি পেলেন না- তাতে কিছু যায় আসে না। জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের মনে গ্রোথিত হয়ে গেছে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এত ভয় পান কেন? আপনারা খুনিকে ছেড়ে দেন। পাচার হয়ে যাচ্ছে সম্পদ, সেগুলো দেখন না। কিন্তু খালেদা জিয়ার ওপর ২ কোটি টাকার মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক মানুষের কথায় দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা ঠিক নয়। বছরের পর বছর দিনের পর দিন যারা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে জায়গা তৈরি করেছেন স্বাধীনতার জন্য, তাদের মধ্য মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অন্যতম। এক ভাষণে স্বাধীনতা আসেনি সে কথা আমরা বার বার বলতে চেয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব এ সময় ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ পল্টনে মাওলানা ভাষানীর জনসভার বক্তব্য স্মরণ করে বলেন, ‘তার বক্তব্য নিয়ে কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, সাফেদ পাঞ্জাবীর ভাসানী অলৌকিক মানুষের মতো বক্তব্য রাখছেন। তিনি তাই ছিলেন। হায়দার আকবর খান রনো সাহেব তার বইয়ে লিখেছেন কী অলৌকিক বক্তব্য ছিল মাওলানা ভাসানীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কিন্তু আজকে এক বারের জন্যও আওয়ামী লীগ তার নাম উচ্চারণ করে না।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যারা প্রবাসী সরকার গঠন করল তাদেরও আওয়ামী লীগ মনে করে না। তাজউদ্দিন সাহেবকে আওয়ামী লীগ একবারের জন্যও মনে করে না। আর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব তো যুদ্ধের কয়েকদিন পরে এসে তাজউদ্দিন সাহেবকে বাদই দিয়ে দিলেন।’
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একজন বললেন যে, ২৫-২৬ মার্চ তারিখে…… (জিয়াউর রহমান বাঙালি হত্যা করেছিলেন), হাস্যকর। এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। উনি যেসব কথা বলেন, তার ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেন না।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে আপনাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যেসব কথা বলছেন, তার সঙ্গে সত্যের কোনো চিহ্ন নেই। সত্য একটাই- এ দেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেল।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসকে আজ বিকৃত করা হচ্ছে। মাওলানা ভাসানীর নাম আজকে কোথাও নাই। ঢাকার ভাসানীর নামে একটি নভোথিয়েটার ছিল, সেটার নামও বদল করে দেয়া হয়েছে। সে জন্য আজকের আলোচনা সভা। আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত তথ্য জনগণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসনান মাহমুদ টুকু, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বক্তব্য রাখেন।