দুটি গণফোরাম বলতে নারাজ ড. কামাল হোসেন । সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
‘দুটি গণফোরাম বলার কোন কারণ নেই’। দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া সদস্যদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাউকে বাধ্য করে দলে রাখা যায় না।’
অন্যদিকে দলের অপর অংশের কর্মসূচি থেকে ড. কামাল হোসেনকে গণফোরাম থেকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে দলের মধ্যে যে বিভক্তি তা ফের প্রকাশ্যে নিয়ে এসে কথা বললেন গণফোরামের দুই অংশের নেতারা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের একপক্ষ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে অপর অংশের আলাদা কর্মসূচি ছিল।
বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দলটির সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘যুব গণফেরাম’ ও ‘ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ’ নামে দুটি সংগঠন বিকেল ৩টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। যদিও সেই অংশের নেতৃত্বদানকারী মোস্তফা মহসিন মন্টু কর্মসূচিতে অংশ নেন নি।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন গণফেরামের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান ও হেলালউদ্দিন।
প্রেস ক্লাবের সামনে ‘যুব গণফেরাম’ ও ‘ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ’ নামে দুটি সংগঠন বিকেল ৩টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। ছবি: নিউজবাংলা
কারা হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল দলটির এই অংশের।
আপনি যখন ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করছেন তখন গণফোরামের আরেক অংশ প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি দিয়েছে এ বিষয়ে জানেন কি না, এবং এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দল থেকে বের হয়ে হয়তো আরেকপক্ষ আরেক বক্তব্য রাখতে পারে। আমি মনে করি, আমার দল সঠিকভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে, কাজ করে যাবে, জনগণের পাশেই তারা থাকবে।’
আপনার দল থেকে একাংশ বেরিয়ে যাওয়ায় এখন দুটি গণফোরাম বলা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক বেরিয়ে গেছে। কাউকে বাধ্য করে রাখা যায় না। যারা ছেড়েছেন তাদের জিজ্ঞাসা করুন তারা কেন ছেড়েছেন।
‘আমরা যারা গণফোরাম করছি তারা মনে করি জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াব। যাতে সরকার যে সব অনুচিত কাজ করছে সেগুলো থেকে সরে দাঁড়ায়।’
যেখানে আপনি জনগণের ঐক্যের কথা বলছেন সেখানে আপনার দলে তো ঐক্য নেই এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় তাদের দলে ফিরে আসতে বলেছি। ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছি। আসুন আলাপ, আলোচনা করি।’
আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক তো পদ ত্যাগ করেছেন এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সফিকুল হক।’
প্রেস ক্লাবের সামনে গণফোরামের অপর অংশের কর্মসূচিতে গণফোরামের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান বলে, ‘গণফোরাম কারও জমিদারী না।
ড. কামাল হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি যাকে এতদিন নেতা মেনেছি, যার কথায় ২৭ বছর জীবনের উত্তম সময় নষ্ট করেছি তাকে আমি গালিগালাজ করতে চাই না। আমি আশা করবো। উনি অনেক কিছু করছেন, সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আগামী দিনে পা বাড়াবেন। ব্যতিক্রম হলে আমরা ছেড়ে দেব না।
তিনি বলেন, দলে গণতন্ত্র দিতে ব্যর্থ হয়েছেন দল ছেড়ে চলে যান। বয়স হয়েছে, আরাম করেন। নাতী-নাতনী নিয়ে খেলাধুলা করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যা বললেন ড. কামাল :
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আপনার বক্তব্য কি সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণের ঐক্যই হচ্ছে মূল জিনিস, আমরা সেই ঐক্যমত গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে রোজার আগেই দলীয় কার্যক্রম জোরদার করার কথা জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করবে তার দল।
সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল আইনের কথা বলে আমাদের যেভাবে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে তা থেকে মুক্তি দিতে হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের আজকে কি অবস্থা তা সম্পর্কে আপনারা অবগত আছেন। নানা রকমের সমস্যা আজ সংকটে রূপ নিয়েছে। এই সংকটগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের ঐক্যের প্রয়োজন। সংকট উত্তরণে জনগণকে ঐক্যমতে আসতে হবে।
যাতে সরকার বাধ্য হয় এসব জিনিসগুলো থেকে সরে দাঁড়াতে। এই অবস্থা বিরাজ করলে এখানে আমাদের সুশাসন পাওয়ার কোনও উপায় থাকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যদি মাঠে না নামি তাহলে এর থেকে উত্তরণ ঘটবে না।
এর আগে ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের একপক্ষ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি সভা করে। অপর অংশ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত অক্টোবরে বিভক্তি দেখা দেয় গণফোরামে। ১৮ অক্টোবর দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগ থেকে আসা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, সুব্রত চৌধুরী, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে বহিষ্কার করা।
এরপর মন্টুদের বাদ দিয়ে ১২ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশটি।
অপর দিকে মন্টুর নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতা এ আদেশ না মেনে ২৬ ডিসেম্বর আলাদা কাউন্সিলের ঘোষণা দেন। কাউন্সিলের দিন দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনকে বাদ দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন বহিষ্কৃত নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশের নেতারা। তবে দুই পক্ষের কোনো কাউন্সিলই হয়নি।