ডিজিটাল নিরাপত্ত আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাকের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারাই সরকারের বিরোধিতা করছেন তারাই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও ঢাকা উত্তর ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৪তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আজকের পত্রিকা খুললে দেখবেন যে, কাটুনিস্ট কিশোর জেল থেকে বেরিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেই বিবৃতিতে বোঝা যায় ভয়ংকর একটা শক্তি পেছনে থেকে, সরকারের আড়ালে থেকে, সরকারের স্ক্রিন তৈরি করেছে।
‘সেই স্ক্রিনে থেকে যারাই সরকারের বিরোধিতা করছেন, যারাই রাষ্ট্রপ্রধানের বিরোধিতা করছেন, যারাই সরকারপ্রধানের বিরোধিতা করছেন তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য অমানবিক নির্যাতন করছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবান্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান লেখক মুশতাক আহমেদ। পরে একই মামলায় কারাবন্দি থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে একটি জাতীয় পত্রিকায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর যে কথা বলেছেন তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
বলেন, ‘মুশতাক আহমেদ শুধুমাত্র লেখার অপরাধে আর কিশোরকে কার্টুন আঁকার অপরাধে নির্মম অত্যাচার করে ছয় মাস আটকে রাখা হয়েছে। এরা তো দুইজন শুধু ছয় মাস, তাদের কথা বলা যায়..।
‘গতকালই এক মহিলা এসেছিলেন আমার কাছে, তিনি একজন রিটায়ার্ড মেজর মোরসালীন, তার স্ত্রী। এক বছর ধরে এই মোরসালীন আটক আছেন জেলে। তার কোনো খবর বাইরে দিতে চায় না। কারণ একটাই, তিনি লিখতেন, তার লেখার কারণে তাকে তুলে নিয়ে গেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে পত্রিকাতে আছে যে, কত মানুষকে, শিশুকে; সাত বছরের শিশু, কত বয়স্কদের তুলে নিয়ে গেছে, জেলে নিয়ে গেছে শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করায়।’
এভাবে মানুষের স্বাধীনতা রোধ করে, গণতন্ত্রের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরা বাংলাদেশের আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সোল অব বাংলাদেশ, গণতন্ত্র যেটা আমাদের আত্মা, সেই আত্মাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘এরা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা, দাম্ভিকতা আর দুর্নীতির বৃত্ত তৈরি করার জন্য গোটা জাতিকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা যারা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের এখন প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হয়- এ জন্য কী আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম?
‘আমার সন্তান যে একটা সুস্থ পরিবেশে মানুষ হতে পারবে না? আমার ভাই সে একটা সত্য কথা উচ্চারণ করতে পারবে না? আমার বোন সে নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না? আমার মা, সে তার সন্তানকে একটু ভালোভাবে দেখতে পর্যন্ত পারবে না? আমাদের যে নতুন শিশু আসছে, সেই শিশু কোন জগতে বাস করবে? কোন জনপদে বাস করবে? যেখানে শুধু হত্যা-হিংসা-ভয়াবহতা সেখানে?’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ দেশে বারবার এ ধরনের স্বৈরাচার এসেছে, এদেশে বারবার যেমন মগ-দস্যুরা, বর্গীরা এসেছে, পশ্চিম থেকে ব্রিটিশরা এসেছে দখল করে নিয়েছে, তেমনি এদেশেরই তরুণ দামালরা, যুবকরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে অস্ত্র নিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
‘১৯৭১ সালে সেই অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের তরুণরা, দামাল ছেলেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করেছে। সেই কথা মনে করে আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে৷’
স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে, বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে আনতে, তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনতে, দেশের ৩৫ লাখ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করাতে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বলেন, ‘সব সময় তরুণরা সবকিছু পালটে দিয়েছে, পরিবর্তন এনেছে। আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবকে পরাজিত করি।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য দেন।