ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সমালোচনা করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুও যেন মুশতাকের মতো ‘স্বাভাবিক’ হয়।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে গয়েশ্বর এ কথা বলেন।
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু এবং সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।
মুশতাক গত বছরের মে মাস থেকে কারাবন্দি ছিলেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মুশতাক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তদন্ত কমিটির অভিমত এই যে এটা ন্যাচারাল ডেথ (স্বাভাবিক মৃত্যু)। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, লেখক মুশতাকের মৃত্যু নাকি স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনাকে বলি, আপনার মৃত্যু যেন মুশতাকের মতোই স্বাভাবিক হয়। আল্লাহর কাছে এ দোয়াই করি।’
সরকারকে আন্দোলনে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক পথ আছে। রাজপথের আন্দোলনে বাধা দিলে বিকল্প পথ খুঁজতে কর্মীরা বাধ্য হবেন। সেই বিকল্প পথে যদি যাই তাহলে দেশের কী হবে, তা কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে।
‘নিরাপত্তা শুধু আমাদের প্রয়োজন নয়। নিরাপত্তা সবারই প্রয়োজন। এ দেশের নিরস্ত্র জনগণ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। আন্দোলন ঠেকাতে অস্ত্র ও পোশাকের ভয় দেখিয়ে কখনোই সত্য কথা আড়াল করা যাবে না। সেই কারণেই বলছি মুক্তি দিন, প্রতিবাদ করতে দিন, গণতন্ত্রকে ফেরত আসতে দিন।’
পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্দেশে বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরে আসলে প্রশাসনে যারা চাকরি করছেন, তারা গর্বিত প্রশাসক হিসেবে জনগণের সামনে নিজেদেরকে হাজির করতে পারবেন। গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্রে পুলিশ প্রশাসন জনগণের সেবা করা বাদ দিয়ে লাঠিচার্জ করছে।
‘জনগণ বাধ্য হবে লাঠি কেড়ে নিতে। জনগণের দেশ জনগণই সিদ্ধান্ত নিবেন। জনগণের গণতন্ত্র জনগণ ফিরিয়ে আনবে। এখানে কোনো মন্ত্র-তন্ত্র কাজে লাগবে না।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা আমাদের কথা বলার অধিকার চাই। আমরা স্বাধিকার চাই। দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গ্যারান্টি চাই। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদেরকে আরও শক্তিসঞ্চার করতে হবে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা একজন একজন করে লক্ষ-কোটি হয়ে স্বৈরাচারী এই সরকারের পতন ঘটাব।
‘যুবদলের গত সভা থেকে যুবদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করা হয়েছে। আমরা এমন সব কারাবন্দিদের মুক্তি চাই।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ অনেকে।