ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাগিদ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আইনটি বাতিলের দাবি ও কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এই তাগিদ দেন।
গত বছরের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যুর পর থেকেই আইনটি নিয়ে নতুন করে শুরু হয় সমালোচনা-প্রতিবাদ।
এই আইনের মামলায় গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ৩ মার্চ ছয় মাসের জামিন দেয় হাইকোর্ট। তিনি প্রায় ১০ মাস কারাগারে ছিলেন।
আইন বাতিল চেয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে আমি বলছি, আপনি এই ডিজিটাল আইনটির অবশ্যই কবর দিয়ে দেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার মঙ্গল চাই। আমরা আপনাকে জীবিত দেখতে চাই। আপনাকে সম্মান করতে চাই। তাই আপনি গোয়ার্তুমি না করে, আপনার উজবুক মন্ত্রীদের কথা না শুনে, এই আইনটি বাতিল করেন।
‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন তার চাটুকারেরা কোথায় ছিল? আল্লাহ না করুক, এমন ঘটনা ঘটলে আপনার ডা. হাছান মাহমুদ বলেন আর আনিসুল হক বলেন, এদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন না করে বাতিলের আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এই যে সরকারি অর্থ লুট হয়েছে একটা মামলা এই পর্যন্ত করেননি। দেশে অনেক আইন আছে। এই আইনের সংশোধন করে কোনো লাভ নেই। আর কত দিন প্রতারণা করে চলবেন?’
‘প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে চাই’
বক্তব্যে টিকা নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে চাই, শেষ মুহূর্তে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে, তার মদদে, সাহস করে টিকা গ্রহণ করেছেন। যে করোনার টিকা এত দিন নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলাম, সেটা উনি এত দিন নেননি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যে তথ্যগুলো উনি প্রকাশ করেননি, সেটা হলো এই টিকা কোন টিকা। এটা কি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নাকি ভারতে উৎপাদিত কোনো টিকা নাকি জনগণ যে টিকা পেয়েছে সে টিকা। সেই সঙ্গে আমি উনাকে শোকবার্তায় জানাচ্ছি, দিনের ভোট রাতে নেওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের যিনি মাস্টারমাইন্ড, এইচ টি ইমাম সাহেব; দুই দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন, যার মৃত্যুতে যত না ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রের জনগণের, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার।
‘আমলাদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অবশ্য এ জন্য আপনি আমলাদের অনেক সুযোগসুবিধা দিয়েছেন। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এইচ টি ইমাম একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন; মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ ছিল।’
‘আপনার অনেক দায়িত্ব’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি গণতন্ত্রের কথা বলেন, আপনার অনেকগুলো দায়িত্ব আছে। যেমন এই টিকাটা যদি আপনি আপনার বাড়িতে বসে না নিয়ে বিএসএমএমইউতে নিতেন তাহলে অনেকগুলো বিষয় দেখতে পেতেন যে, কোথায় কী চলে।
‘কিন্তু সেখানে আপনি যান না কারণ আপনাকে গোয়েন্দা বাহিনী ঘর থেকে বেরোতে দিতে চায় না এবং আপনিও তাদের বন্দি হয়ে আছেন। এই সত্যটা প্রকাশ করতে হবে যে আপনি কেন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছিলেন।’
কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের প্রসঙ্গ টেনে বর্ষীয়ান এই চিকিৎসক বলেন, ‘একটা কার্টুনিস্ট কার্টুন এঁকে ব্যঙ্গ করে দেশের কী ক্ষতি করতে পারে? তাকে ১০ মাস জামিন দেননি। লেখক মুশতাক আহমেদের কথা আপনারা বলছেন, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কাউকে যদি আপনারা চিকিৎসা না দেন তাহলে সেটাকে কি স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যাবে?’
‘১ লাখের বেশি জেলে’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, বর্তমানে দেশে এক লাখের বেশি মানুষ কারাগারে।
তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলেও এত মানুষ জেলে ছিল না; পাকিস্তান আমলেও না। ঢাকার কাশিমপুর কারাগার বলেন আর কেরানীগঞ্জ বলেন, সেখানকার হাসপাতালে একটা ইসিজি মেশিন নাই, ভেন্টিলেটর নাই। আপনার বাবা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও কারাগারের এই হাসপাতালগুলোর দুরবস্থার কথা বলে গেছেন।
‘আপনি তো আসলে আমাদের ছোট করছেন না। আপনি আপনার বাবাকে ছোট করছেন। আমাদের নেতাকে ছোট করছেন।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে জয়শঙ্কর এসেছেন। সেই গৎবাঁধা কথা বলছেন, বিনা বিচারে মারা হবে না। কিন্তু ফেলানীর বিচার কি করেছ? প্রতি সপ্তাহে সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছে। আজকে কানেকটিভিটি মানেটা কী?
‘গুজরাটের পণ্য আসামে যেতে পারে না, সেটা আমার উপর দিয়ে যাবে, সুলভে। আর আমরা আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে করা দেশটা তাদের জন্য ছেড়ে দেব।’