মুশতাক আহমেদ রাষ্ট্রীয় হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি, লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যু ও নোয়াখালীর বশিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এমন অভিযোগ করেন।
কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব এমনটি দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম, এই হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।'
ফখরুল বলেন, ‘শুধু একটি নয়, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে প্রায় ৭০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, ইতিপূর্বেও শুধু সরকারের সমালোচনা করে কার্টুন বা লেখার কারণে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে গৃহবধূকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন আমাদের সাংবাদিকরা।’
‘এই সরকার সম্পূর্ণ একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার। তাদেরকে জোর করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে এবং টিকে থাকার জন্য এই ধরনের সম্পূর্ণ গণবিরোধী আইন তৈরি করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো এমন সব আইনের মাধ্যমে তারা জনগণের কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, সেই সাজা প্রত্যাহার করতে হবে। সব মামলা তুলে নিতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।’
‘অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পন্ড করে দেয়ার পর এটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনের প্রথম কর্মসূচি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে রাস্তায় রাস্তায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমি দেখেছি কীভাবে নেতা-কর্মীদের পুলিশ বাধা দিচ্ছে। আমি পুলিশের কাছে গেলাম পরিচয় দিলাম। আমরা দু:খ লাগে, দেশ থেকে আদব-কায়দা সব উঠে গেছে নাকি।’
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহসভাপতি আবদুল খালেক হাওলাদার, মোনায়েম মুন্না, কেন্দ্রীয় নেতা এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল আলম মজনু, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহিনসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে সমাবেশ শেষ হলে দ্রুত নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল ছেড়ে যান। বিএনপির আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থেকে নেতা-কর্মীদের চলে যেতে বলেন।