গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পিছিয়েছে। বিচারক নতুন শুনানির রেখেছেন আগামী ৫ এপ্রিল।
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নজরুল ইসলাম বুধবার শুনানির নতুন তারিখ দেন।
২০০৭ সালে করা মামলাটির শুনানি ঠিক কতবার পেছানো হয়েছে এ ব্যাপারে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি খালেদা ও দুদকের আইনজীবীরা।
অসুস্থ থাকার কারণে দেখিয়ে এদিনও আদালতে হাজির হননি খালেদা জিয়া। তার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও জিয়াউদ্দীন জিয়া।
শুনানিতে আদালতকে মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ, তাই তিনি আদালতে আসতে পারেননি।’
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) পাইয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
২০০৮ সালের ১৩ মে তদন্ত শেষে দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদা খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন।
আসামিদের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এম কে আনোয়ার, এম শামছুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন।
বাকি আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন ও এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌসচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার নাইকো দুর্নীতি মামলায়ও কেরানীগঞ্জের কারা ভবনে অস্থায়ী স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে হাজির হতে পারেননি খালেদা জিয়া। মামলাটিতে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা।
এরই মধ্যে দুটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে বিপক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।
খালেদাকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে যত চেষ্টা করেছে তার সবই বিফলে গেছে বিএনপির। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর। অবশ্য বিএনপি এই উদ্যোগে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে।
খালেদার স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন। ২৪ শে মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য। পরের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন বিএনপি নেত্রী। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
বিএনপি প্রধানের দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো ও তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় দফায় আবেদন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।