রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের এক দিন আগে বন্ধ হওয়া বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা আগে বিকেল ৪টার দিকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়তে শুরু করে। ঢাকাগামী বাস ছাড়া শুরু হয় এর একটু পর।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে তাদের মধ্যে সংঘাতের যে আশঙ্কা ছিল, তা কেটে যাবার পরই বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। সোমবার সকাল থেকেই রাজশাহী থেকে সারা দেশের বাস চলাচল কমতে থাকে। দুপুরের পর থেকে একে একে বন্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যায় রাজশাহী থেকে কোনো জেলা বা উপজেলার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়েনি। কোনো জেলার বাসও আসেনি। সড়কে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজশাহী।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীবাহী বাসের বিকল্প হিসেবে অটোরিকশা ও ছোট যানবাহনগুলো সোমবার চালু ছিল, তবে মঙ্গলবার সকালে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।
বাস চলাচল বন্ধের কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকনেতা ও বাসমালিকরা।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী জানান, বগুড়ায় পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির একটি প্রতিবাদ সভা ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেখানে একটি দল হামলা চালিয়ে চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি। এর প্রতিবাদে সেদিনই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরও জানান, ওই ঘটনার পর পৌরসভা নির্বাচনের জন্য ধর্মঘট শুরু করা হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়া মাত্র ধর্মঘট শুরু হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ৬ মার্চ বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক আছে। সেই পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হলো।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো জানান, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা সড়কে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছিলেন। গাড়ি ভাঙচুর করা হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা ছিল। তাই শ্রমিকের জীবন ও যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য বাস বন্ধ করা হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, বিকেল ৪টার পর পরিস্থিতি ভালো দেখে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। ঢাকা রুটেও সব বাস চলছে। বুধবার সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবে সব রুটে বাস চলবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাদের সমাবেশ যাতে সফল না হয়, সে জন্যই সরকার বাস বন্ধ করে দেয়।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘সমাবেশে যাতে লোক সমাগম না হয়, নেতা-কর্মীরা যাতে না আসতে পারে, সে জন্য বাস বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মানুষ বিভিন্নভাবে এসেছে, অনেকে হেঁটে এসেছে। সমাবেশ সফল হয়েছে।’
রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আওয়ামী লীগও এর সঙ্গে জড়িত নয়।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘শ্রমিকরা নিজেদের দাবি নিয়ে বাস বন্ধ করেছেন এক দিন আগে। নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর একটি প্রক্রিয়া বা পাঁয়তারা বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন এসব জনসভা আর পছন্দ করে না। যেহেতু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল না। তাই তারা মানুষকে বোঝাতে চাচ্ছে, সরকার তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে কোনো মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়া হয়নি।