খুলনার পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীতেও হঠাৎ বন্ধ বাস। তীব্র ভোগান্তিতে মানুষ।
দুটি মহানগরেই ধর্মঘটের দিন বিএনপির সমাবেশ থাকায় দলটি অভিযোগ করছে, বাসমালিকদের এই কর্মসূচির পেছনে সরকারের হাত আছে। তারা চাইছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসে বড় সমাবেশ করুক।
যদিও ক্ষমতাসীন দল এই অভিযোগ স্বীকার করতে চাইছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এভাবে বাধা দিয়ে কাজ হবে না। তিনি বলন, ‘দেশের জনগণ জেগে উঠেছে। কোনো নিয়মেই আর আটকানো যাবে না। বাধা না আসলে আন্দোলন কিসের? যত বাধা আসবে, আন্দোলন তত শক্তিশালী হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে এটা কি আসলেই সত্য? দেশের পরিবহন খাত কি অচল হয়ে গিয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির মিথ্যাচার, গুজব আর দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের কারণেই তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। এখন আর মানুষ এসব মিথ্যাচার বিশ্বাস করে না। তারা জানে আর ভোট পাবে না। নেতারা ব্যর্থ, নেতারা ঘরে বসে থাকেন বা বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য যে পারফরমেন্স তা বিএনপি নেতাদের নেই। তারা কর্মীদের স্বার্থরক্ষা করে না, নিজেদের স্বার্থ দেখে। তাদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনার শহিদ মহারাজ চত্বরে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে খুলনার ১৮ রুটে ২৪ ঘণ্টা পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখে খুলনা বাসমালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি।
আগাম ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। সমাবেশের দিন এমনকি অটোরিকশা, হিউম্যান হলারজাতীয় গাড়িও বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপর সড়কে আবার ফেরে গাড়ি।
বিএনপির সমাবেশটি ডেকেছেন গত দুই বছরে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে ধানের শীষ নিয়ে পরাজিত প্রার্থীরা।
কর্মসূচিটি ঘোষণা হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকার দুটি, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থীরা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তারা ধারাবাহিকভাবে সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবেন।
প্রথম সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে। তবে সেদিন ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ থাকায় সেই সমাবেশ আর হয়নি।
প্রথম সমাবেশ ছিল বরিশালে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সেই সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকা থেকে সড়কপথে রওনা হন ভোরে। তারা বাধার মুখে পড়েন মাওয়াতে।
ঘোষণা না দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় ফেরি পারাপার। পরে ছোট লঞ্চে করে নেতা-কর্মীরা পার হন পদ্মা নদী। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নিয়েও হয় ভোগান্তি। ঘাটে থাকা মাইক্রোবাসগুলো বিএনপির নেতাদের বহন করতে রাজি হচ্ছিল না। পরে স্থানীয় ছাত্রদল নেতার পরিচিত কয়েকজন তাদের বহন করতে রাজি হন।
৯ দিন পর খুলনার সমাবেশের আগে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মো. নুরুল ইসলাম বেবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায়’ তারা এই কাজ করেছেন।
মঙ্গলবার বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকেই রাজশাহী থেকে আন্তঃজেলা ও উপজেলার বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিকরা
বিএনপির অভিযোগ, তাদের সমাবেশ যেন সফল হতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগ শ্রমিকনেতাদেরকে চাপ দিয়ে এই কাজ করিয়েছে।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক সামছুজ্জামান চঞ্চল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবহন মালিকদের ডেকে নিয়ে খুলনার ১৮ রুটের সব গাড়ি চলাচল বন্ধের পাশাপাশি সবগুলো ঘাট বন্ধ রেখে সরকার বিএনপির সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা চালিয়েছে। তারপরও জাতীয়তাবাদী শক্তি সমাবেশ সফল করেছে।’
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহবুবুল আলম সোহাগ এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন বন্ধ করার বিষয়ে খুলনা বাসমালিক-শ্রমিকদের যে সিদ্ধান্ত, সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং বিএনপির দেউলিয়াত্ব ঢাকার জন্য আওয়ামী লীগের উপর অভিযোগ আনা হচ্ছে।’
বিএনপির রাজশাহী সমাবেশ ঘিরেও ঘটল একই ঘটনা। মঙ্গলবারের সমাবেশের আগে কোনো ঘোষণা না দিয়ে সোমবার বন্ধ করে দেয়া হয় বাস চলাচল। রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। তবে এসেছে কিছু কিছু।
রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
তবে সমাবেশের দিন মঙ্গলবার কোনো গাড়ি মহানগরে আসেনি, কোনো গাড়ি বের হয়নি। নগরের ভেতরে অটোরিকশা চলাচলও ছিল সীমিত।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো নিউজবাংলাকে জানান, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা সড়কে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন। গাড়ি ভাঙচুর করা হতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। তাই শ্রমিকের জীবন ও যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য বাস বন্ধ করা হয়েছে।
বিএনপির রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দাবি, তাদের বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ না আসতে পারে।