নাইকো দুর্নীতির মামলা হতে অব্যাহতি চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের শুনানি শেষে পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে ১৮ মার্চ।
কেরানীগঞ্জের কারা ভবনে নির্মিত ২ নম্বর ভবনে অস্থায়ী স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলছে।
শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন খালেদা। এরপর তার অব্যাহতি আবেদনের ওপর শুনানিতে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
তিনি জানান, নাইকো চুক্তির সিদ্ধান্ত ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আগের প্রধানমন্ত্রী। পরে সেটা বাস্তবায়ন করেন খালেদা জিয়া। ফলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়।
এদিন মানবিক বিবেচনায় এই মামলায় স্বশরীরে খালেদা জিয়ার হাজিরা দেয়া থেকেও অব্যাহতি চান তার আইনজীবীরা।
এ ব্যাপারে মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫ ধারায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা করছি। কারণ ইতোপূর্বে দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো নেই।’
শুনানিতে বলা হয়, খালেদার পক্ষে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার এবং সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা হাজিরা দেবেন। শুনানি শেষে আবেদনটি গ্রহণ করেন বিচারক শেষ হাফিজুর রহমান।
ফলে এই মামলায় আপাতত স্বশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে না খালেদা জিয়ার। তবে অব্যাহতি আবেদনের ওপর শুনানি শেষ না হওয়ায় আগামী ১৮ মার্চ পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন বিচারক।
এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি কোনো শুনানি করেন নাই।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় যে অভিযোগ
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন।
২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এএইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ৷
এর মধ্যে এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরই মধ্যে দুটি দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে বিপক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।
খালেজাকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে যত চেষ্টা করেছে তার সবই বিফলে গেছে বিএনপির। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। অবশ্য বিএনপি এই উদ্যোগে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে।
খালেদার স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন। গত ২৪ শে মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য। পরের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন বিএনপি নেত্রী। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।