কালা কানুন আখ্যা দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, এই আইনের সুযোগে সরকার মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে।
গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়। রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এই আইনে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের সবার মুক্তির পাশাপাশি এই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ জানতে বিচারিক তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।
দেড় দশক আগে ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটি করা হয়। আর পরে দুই দফা সংশোধন করা হয়, প্রথমে ২০১৩ ও পরে ২০১৮ সালে। এখন এর নাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
বেশ কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি এই আইনটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি হিসেবে অভিহিত করে আসছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় এই আইনটি থাকা জরুরি।
সরকারকে ‘গণবিরোধী ও স্বৈরাচারি’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলে, ‘সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য সকল সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে বিভিন্ন কালা-কানুন বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত একটি ভয়ংকর নির্যাতন মূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, সকল সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে চলেছে।’
লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে কোনো চিকিৎসা পাননি বলেও অভিযোগ করে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, ‘অবিলম্বে লেখক মোশতাক আহমেদের কারাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ধারের এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছে।’
কাদের মোল্লাকে ‘শহিদ’ বলে কারাগারে যাওয়া সাংবাদিকের পাশে বিএনপি
মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ ও বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন গাজীকে গ্রেপ্তারেরও সমালোচনা করেছে বিএনপি।
কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকরের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর রায় কার্যকরের বার্ষিকীতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদৎবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রাপ্ত আখ্যা দেয়া হয়। দাবি করা হয়, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জেসিও মফিজুর রহমানের ডাকে কাদের মোল্লা এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। পোড়ানো হয় সংগ্রাম পত্রিকার কপি। ওই ঘটনার পর সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে ওই রাতেই হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।
মামলায় দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজী ও বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় রুহুল আমিন গাজীকে। তিনি এখনও কারাগারে।
বিএনপি বলছে, ‘দৈনিক সংগ্রামের বয়োবৃদ্ধ সম্পাদকসহ অসংখ্য সাংবাদিক, লেখক, পেশাজীবী আটক করে বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এই অবৈধ দখলদার আওয়ামী লীগের সরকারের প্রশ্রয়ে হত্যা নির্যাতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।’
সম্প্রতি নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যায় ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করেছে বিএনপি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বিনপির সমাবেশ বানচালে পুলিশ নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে আটক করেছে বলেও অভিযোগ করেছে বিএনপি। বলা হয়, এই সমাবেশে লোক আসা ঠেকাতে বাস মালিকদের ধর্মঘটে বাধ্য করা হয়েছে।
বিএনপি বলছে, সরকার জনগণের মত প্রকাশের অধিকার, সভা, সমাবেশের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার নগ্নভাবে খর্ব করে চলেছে এবং তাদের স্বৈরাচারি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।