দলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে বিএনপি অংশ নেবে কি না; বিএনপির কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই, আজই প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি মার্চজুড়ে ১৯ দিনের কর্মসূচি রেখেছে। এর মধ্যে দুটি কর্মসূচি সবাইকে অবাক করেছে, এ কারণে যে দলটি প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক দুটি দিন পালন করবে এবার।
দিবস দুটি হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ২৫ মার্চ। এর মধ্যে ৭ মার্চের আলোচনা সভার প্রতিপাদ্য না জানালেও ২৫ মার্চেরটিকে তারা বলছে, ‘কাল রাত্রির’ আলোচনা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিবস দুটি এর আগে বিএনপিকে কখনও পালন করতে দেখা যায়নি। এবার পালনের পরিকল্পনাকে দলের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করছেন বিএনপির নেতারা।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপির এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি যে কর্মসূচি আগে কখনও করেনি, এখন নতুন করে করছে, সেগুলো দেশবাসী বা আওয়ামী লীগ যেন ইতিবাচকভাবে নেয়।’
অতীতে বিএনপি দিবস দুটি পালন তো করেইনি, বরং ক্ষমতায় থাকাকালে ৭ মার্চের আয়োজনে দলটি নানা সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে থাকেন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বিএনপির শাসনামলে রেডিও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি কার্যত নিষিদ্ধ ছিল।
আওয়ামী লীগের নেতারা বারবার অভিযোগ করে আসছেন, তারা ভাষণটি বাজাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বিরোধী দলে থাকতে।
২০১৭ সালে ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকো স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি উদযাপনে ওই বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আনন্দ সমাবেশ করে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। ছবি: সংগৃহীত
তখনও ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বিষোদগার করতে দেখা যায় বিএনপিকে। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বিএনপিপন্থি সংগঠন জিয়া পরিষদের এক আলোচনায় বিএনপির সহসভাপতি শামসুজ্জামান দুদু বলেছিলেন, ‘কবে কোন কালে কে বক্তৃতা করেছিল, তা নিয়ে কী মাতামাতি! সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামিয়ে নৃত্য করতে বাধ্য করা হলো। এর ফল ভালো হবে না।
‘৭ মার্চের ওই ভাষণ ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য, স্বাধীনতার জন্য নয়। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল জিয়াউর রহমান।’
২৫ মার্চ কালরাতেও বিএনপির কোনো ধরনের কর্মসূচি এই প্রথম।
বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সরকার। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালিত হয় ৯ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে এখন ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায়।
আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো ২৫ মার্চ রাতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু এই দিবসটিও উপেক্ষা করে আসছে বিএনপি। বিষয়টি নজর এড়ায়নি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগের আলোচনায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত গণহত্যা দিবস পালন করল না। কেন পালন করল না?
‘এই দিবস পালন না করার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে একদিকে তারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, অপরদিকে যারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী, অগ্নিসংযোগকারী, মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী, যারা অপরাধী-তাদেরকেই এরা আপন মনে করে।’
প্রথমবারের মতো ৭ মার্চ ও ২৫ মার্চ পালনের উদ্দেশ্যে বিএনপির কর্মসূচি রাখাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে যারা এতদিন নিষিদ্ধ করে রেখেছিল, তারাই এখন ৭ মার্চ পালন করবে। বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়।’