স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপি যেসব কর্মসূচি রেখেছে তার মধ্যে দুটি কর্মসূচিকে অভিনব বলা যায় এ কারণে যে, দলটি প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক দুটি দিন পালন করতে যাচ্ছে।
দিবস দুটি হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ২৫ মার্চ।
বিএনপি মার্চজুড়ে যে ১৯ দিনের কর্মসূচি রেখেছে, তার মধ্যে এই দুই দিনই রেখেছে আলোচনা সভা।
৭ মার্চের আলোচনা সভার প্রতিপাদ্য জানানো না হলেও ২৫ মার্চেরটিকে তারা বলছে, ‘কাল রাত্রির’ আলোচনা।
বিএনপির একজন নেতা তাদের এই কর্মসূচিকে দলের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এর আগে কখনও বিএনপি এই দুটি দিনে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করেনি। বরং তারা ক্ষমতায় থাকাকালে বিশেষ করে ৭ মার্চের আয়োজনে নানা সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করছে বর্তমানের ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি যে কর্মসূচি আগে কখনও করেনি, এখন নতুন করে করছে, সেগুলো দেশবাসী বা আওয়ামী লীগ যেন ইতিবাচকভাবে নেয়।’
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বিএনপি শাসনামলে রেডিও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ বারবার অভিযোগ করে আসছে, তারা ভাষণটি বাজাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে বিরোধী দলে থাকতে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করছেন দলের নেতারা
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির কর্মসূচি নির্ধারণ কমিটির প্রধান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৭ মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিন। সেটিকে স্মরণ করেই এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
বিএনপি বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে কোন দৃষ্টিতে দেখছে বা ৭ মার্চের কী মূল্যায়ন করছে, সেই বিষয়টি অবশ্য জানা যায়নি বিএনপি নেতার কাছে। কারণ, তিনি এ প্রসঙ্গে আর বেশি কথা বাড়াননি।
৭ মার্চ পালনে বিএনপি কর্মসূচি দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের যদি শুভবুদ্ধি হয়, তাহলে ভালো। ইতিহাসের সত্যকে স্বীকার করলে স্বাগত জানাব। আর যদি এটা তাদের কূটকৌশল হয়, তাহলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’
চার বছর আগেও ৭ মার্চকে কটাক্ষ
২০১৭ সালে ইউনেসকো ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি উদযাপনে ওই বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আনন্দ সমাবেশ করে।
সেই সমাবেশের সমালোচনা করে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বিএনপিপন্থি সংগঠন জিয়া পরিষদের এক আলোচনায় বিএনপির সহসভাপতি শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কবে কোন কালে কে বক্তৃতা করেছিল, তা নিয়ে কী মাতামাতি! সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামিয়ে নৃত্য করতে বাধ্য করা হলো। এর ফল ভালো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ওই ভাষণ ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য, স্বাধীনতার জন্য নয়। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল জিয়াউর রহমান।’
গণহত্যা দিবসের নীরবতাও ভাঙবে
২৫ মার্চ কালরাতেও বিএনপির কোনো ধরনের কর্মসূচি এই প্রথম।
বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সরকার। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালিত হয় ৯ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে এখন ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায়।
২৫ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হলেও বিএনপি দিবসটিকে উপেক্ষা করে আসছে তিন বছর
তবে বিএনপি গত তিন বছরে এই দিবসটিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। আর বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগের আলোচনায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সেদিন বলেন, ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত গণহত্যা দিবস পালন করল না। কেন পালন করল না? এই পালন না করার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে একদিকে তারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, অপরদিকে যারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী, অগ্নিসংযোগকারী, মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী, যারা অপরাধী-তাদেরকেই এরা আপন মনে করে।’
বিএনপিকে নিয়ে শেখ হাসিনার সব বক্তব্যের জবাবই দেন বিরোধী দলটির নেতারা। তবে এই বক্তব্যের কোনো জবাবও তারা দেননি কখনও।
এবার প্রথমবারের মতো এই দিবসটি পালনের বিষয়ে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি আমরা রাজনৈতিক গণ্ডি থেকে বের হয়ে সর্বজনীন করার জন্যই মাসব্যাপী নানা আয়োজন রেখেছি, যাতে দেশের সর্বস্তরের জনগণ এখানে অংশগ্রহণ করতে পারে।’