বিএনপি নেতাদের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ কঠোর সমালোচনা করেছেন তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে ছাত্রদের পাশে না দাঁড়ানোয় বিএনপি নেতাদের তুলোধুনা করে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিতে অনেক বড় নেতা থাকলেও তারা বধির ও অন্ধ হয়ে গেছেন।’
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রধান দাবি হলেও ‘মাজা সোজা করে’ তারা সে দাবি জানাতে পারছেন না বলেও মনে করেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন, সরকার একের পর এক ভুল করে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এর কোনো ফায়দা নিতে পারছে না। তারা কেবল দেখেই যাচ্ছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাফর) আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে অনেক বড় নেতা থাকলেও তারা বধির ও অন্ধ হয়ে গেছেন। সরকার একের পর এক ভুল করে গেল। তারা শুধু দেখেই যাচ্ছেন, কিছুই করতে পারছেন না।’
১৯৭১ সালের আজকের দিনে পল্টন ময়দানে ছাত্র ইউনিয়নের চীনপন্থি মেনন গ্রুপের এস সমাবেশে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা ঘোষণাপত্র’ পাঠ করার স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা কাজী জাফর আহমেদ তখন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে মতভেদের কারণে তিনি একই নামে আরেকটি দল গঠন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গী হন।
সরকার পতন আন্দোলনের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অফিস-আদালত, মাদ্রাসাসা-মক্তব সব খোলা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কারণ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো খুলে দিলে সরকার পতনের আন্দোলন হতে পারে।’
গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীরা যেসব সোচ্চার ছিলেন, তেমনি এখন আবার হল খুলে দেয়ার দাবিতে মাঠে নেমেছেন তারা।
করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
১৭ মে হল আর ২৪ মে থেকে পুরোদমে শুরু হচ্ছে ক্লাস। তার আগে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে দেয়া হবে করোনার টিকা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এতদিন অপেক্ষা করতে রাজি নন। তারা দাবি করছেন, হল খুলে দিতে হবে ফেব্রুয়ারিতেই।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। অলস শিশুরা হিন্দি ফিল্ম দেখে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। আপনারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা কী করছেন? ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন না কেন? আপনাদের ঘুম কি ভাঙে না? কেন তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না? ছাত্রদের আন্দোলন চাঙা হলেই জনগণের অধিকার ফিরে আসবে, মুক্তি পাবে খালেদা জিয়া।’
বিএনপি নেতাদেরকে মাজা বাঁকা বলে কটাক্ষ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের ইস্যু একটাই, বেগম জিয়ার মুক্তি। তাও মাজা সোজা করে মুক্তি চাইতে সাহস পান না।
‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। যেমন আজিজ সাহেব (সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ) তার ভাইয়ের অধিকার আদায় করে নিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা ‘বন্দি’, ‘নিঃসঙ্গ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে কেউ নেই বলেও মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরীসহ কেউ নেই প্রধানমন্ত্রীর পাশে। তিনি বড় একা। তিনি এক রকম বন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
‘আওয়ামী লীগ ভুল পথে চলছে। মাঝিবিহীন নৌকা চলছে। একটু ধাক্কা দিলে নৌকা ডুবে যেতে পারে।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে কোনো লাভ নেই। একটা প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো চলছে না।
‘হঠাৎ জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিতে চাচ্ছে সরকার। এর কারণ হলো গতি ঘুরানো। যারা এ হীন কাজে সম্পৃক্ত, তারা শুধু জিয়াউর রহমানকেই নয়, বঙ্গবন্ধুকেও ছোট করছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্ব ও এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন।