অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি সাংবিধানিক নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল একটি রাজনৈতিক পদ। বিএনপির বক্তব্য অসত্য ও ভুল।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে নজরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে নতুন ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক পদে অনেক সময় দলীয় কাউকে নিয়োগ দিলেও সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিকে দলীয় পদে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ১৯৭৫ সালে বাকশালের কমিটি গঠনের পর আর হয়নি।
সেলিম মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। প্রথমত এখানে জনাব আমিন উদ্দিনকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রাখা হয়নি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তাকে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে, একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা সাংবিধানিক পদ না।’
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক পদ হচ্ছে সে সকল পদ, যেগুলোর মেয়াদ সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত, সংবিধান দ্বারা রক্ষিত। বিএনপি মনে করছে, অ্যাটর্নি জেনারেল পদের নাম যেহেতু সংবিধানে উল্লেখ আছে এবং সংবিধানে অ্যাটর্নি জেনারেল-সংক্রান্ত একটা পরিচ্ছেদ আছে, সে জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল পদটা সাংবিধানিক। এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা।
‘সংবিধানে কোনো পদের উল্লেখ থাকলেই সেটি সাংবিধানিক পদ হয় না। সংবিধানে অনেক পদের উল্লেখ রয়েছে যে পদগুলো সাংবিধানিক পদ নয়। যেমন: আমাদের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-সংক্রান্ত একটি অধ্যায় রয়েছে। সংবিধানে সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে উল্লেখ আছে। জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদসমূহের উল্লেখ রয়েছে। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-সংক্রান্ত একটি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো সাংবিধানিক পদ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের বিধান অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি যতক্ষণ চাইবেন, ততক্ষণ তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। তার পদের কোনো সাংবিধানিক প্রটেকশন নেই।’
সারা বিশ্বে অ্যাটর্নি জেনারেলদের কাজ সেই দেশের সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘সব দেশেই অ্যাটর্নি জেনারেল রাজনৈতিক পদ। আমেরিকাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে করা হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের মন্ত্রী।’
সেলিম মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের আইন ও প্রথা অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন, নির্বাচন করতে পারেন, বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগ দিতে পারেন। এমনকি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কাজ।
বিএনপি সংবিধান ও আইনের সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল পদ এবং আওয়ামী লীগের উপকমিটিকে বিতর্কিত করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।