আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষ না পেয়ে এখন নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাংবাদিক নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি আক্রমণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও।
সোমবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তির মামলায় দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন।
নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তাদের এই ঝগড়াঝাটির মধ্যে নিরীহ সাংবাদিক মুজাক্কিরকে জীবন দিতে হলো। কাদের সাহেব, আপনি তো প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এর উত্তর আপনি কী দেবেন? আপনার ভাই এবং আওয়ামী লীগের এক নেতার মধ্যে সংঘর্ষের সময় নিরীহ সাংবাদিক নিহত হলো। এখন কোথায় মুখ লুকাবেন?’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনারা এখন প্রতিপক্ষ না পেয়ে নিজেরা নিজেরাই মারামারি করছেন। আপনার ছোট ভাইকে আপনি সামাল দিতে পারেন না। আপনার ছোট ভাই এখন বিবেকের তাড়নায় হোক অথবা পরিবারের মধ্যে লেনদেন নিয়ে কোনো ঘাটতির কারণে হোক সত্য কথাগুলো বলে দিচ্ছেন।
‘তিনি বলছেন যে নির্বাচন ফেয়ার হয়নি, দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এটা কাদের মির্জা বলছেন, যিনি আপনার ছোট ভাই। আমরা যে কথাগুলো প্রতিদিন বলছি, জনগণ যে ঘটনা নিজের চোখে দেখেছে, সেই কথা এখন আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই বলছেন।’
আল জাজিরা নিয়ে আদালতের আদেশের সমালোচনা
বাংলাদেশ নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনলাইন থেকে সরিয়ে নিতে উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন রিজভী।
বিএনপি নেতার দাবি, যে বিচারপতিরা এই আদেশ দিয়েছেন, তারা নিরপেক্ষ নন।
রিজভী বলেন, 'আজকে আইন-আদালত বিচারক সব মাফিয়াতন্ত্রের অধীনস্ত। রাষ্ট্রশক্তি যেখানে মাফিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে কোনো আইন-আদালত, প্রশাসন কেউ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। তারা প্রত্যেকেই সরকারের মুখাপেক্ষী। তারা প্রত্যেকেই শেখ হাসিনার মুখাপেক্ষী।
‘সংবিধান যে অধিকারটুকু দিয়েছে, সেই অধিকারকে বানচাল করে আদালত কী করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারে যে, ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে এই রিপোর্ট সরিয়ে ফেলতে হবে?’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিটিআরসিকে দিয়ে আপনি আল জাজিরার রিপোর্ট ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু এটা করে কোনো লাভ হবে না।
‘আমাদের কুকীর্তিগুলো যেগুলো দেশে-বিদেশে প্রচারিত হচ্ছে, এই বিষয়ে আর কেউ কথা বলবে না? আপনি কি চাপা দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী? আপনি চাপা দিতে পারবেন না।’
সরকারকে মাফিয়া আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, ‘যে ঝড় উঠেছে এই ঝড়ের মধ্যে বালিতে মাথা গুঁজে রাখলে ঝড়ের প্রভাব কিন্তু কমবে না। এই ঝড়ে এই মাফিয়াতন্ত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। চারদিকে অন্যায়-অবিচার, গুম-খুন যেভাবে আজকে বিস্তার লাভ করেছে, এটা চিরদিন চলতে পারে না। এর অবসান হবেই।
‘এত অন্যায় অবিচার, এত রক্তপাত এর মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। এই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবেই, আইনের শাসন ফিরে আসবে। এই অপরাধীদের বিচার হবেই।’
বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যেরও জবাব দেন রিজভী। বলেন, 'আপনি ঠিকই বলেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। বিএনপির মরা গাঙ্গে জোয়ার আসবে না। মরা গাঙ্গে এখন রক্তের স্রোত বয়। বিরোধী দলকে গুম খুন করে যে রক্ত ছড়িয়েছেন, সেই রক্তের স্রোত এখন শুকনা নদীতে প্রবাহিত হয়।’