নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিবাদেও জড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম সেলিম বলছেন, তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে বসিয়ে কাদের মির্জাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। পরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তার বিরোধিতা করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি বলছেন, তার বহিষ্কার সুপারিশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় পৌরসভা নির্বাচনের আগে আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নোয়াখালীর নেতাদের নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
শুক্রবার রাতে কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত একজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শনিবার সন্ধ্যায় কাদের মির্জাকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেন্দ্রের কাছে বহিষ্কারের সুপারিশ করে চিঠি দেয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল সভাপতি সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী দুজনেরই। বহিষ্কারের সুপারিশের বিষয়টি চিঠি দেয়ার পরপরই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কারের সুপারিশের কথা নিশ্চিত করেন একরামুল করিম।
কিন্তু তার ঘণ্টা দুয়েক পরেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম গণমাধ্যমকে কাদের মির্জার অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা নিউজবাংলাকে তখন জানান, ‘ওপরের নির্দেশে’ কাদের মির্জাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এরপরই বিবাদে জড়ান তিনি ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।
একরামুল করিম চৌধুরীর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক লাইভে এসে সভাপতি সেলিমকে নীতিহীন অ্যাখ্যা দেন। বলেন, ‘কাদের মির্জার অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ বহাল আছে।’
শনিবার রাত ৯টা ২৭ মিনিটে একরামুল করিম চৌধুরী লাইভে এসে বলেন, ‘সেলিম ভাই ঢাকা থেকে এসে বলল মির্জার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সে হিসেবে আমরা মির্জার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিয়েছি। এখন ইয়েতে বলতেছে এটা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি আপনাদের বলতে পারি আমার জানা মতে, আমি জানি না, কারণ একটা লোক অপরাধী যে নোয়াখালীতে না, সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগকে ছোট করেছে। তাকে তো ছাড়া যায় না। তার বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি জেলা আওয়ামী লীগ। আমার সভাপতি কী অবস্থানে আছেন জানি না, উনি নাকি বলতেছেন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
তিনি সভাপতিকে নীতিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তার অবস্থান, তিনি আমাকে দিয়ে নির্দেশনা দিলেন, পরে উনি অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ালেন। উনিও নীতিগতভাবে নীতিহীন হয়ে গেলেন। আমি আপনাদের বলি, কাদের মির্জার অব্যাহতি অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন জায়গায় যেসব কথাবার্তা হচ্ছে এগুলো ঠিক না। কারণ এ ধরনের লোককে দলের অবস্থানে রাখা উচিত না। তার অব্যাহতিটা বহাল রইল।’
এসপি, ওসির প্রত্যাহার চেয়ে সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন কাদের মির্জা। ফাইল ছবি
কাদের মির্জাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ এবং তার বিরুদ্ধে একরামুল চৌধুরীর অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয় এএইচএম খায়রুল আনম সেলিমের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি নীতিহীন, উনি নীতিবান হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাজনীতি উনাদের ব্যবসা, আমি একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে একমত নই।’
সেলিম বলেন, ‘উনি মির্জার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, এটা আমাকে জানিয়েছেন। আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থার কথা ভেবে সম্মতি দিয়েছি। কিন্তু পরে দেখি জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে আমার স্বাক্ষর স্ক্যানিং করে কাদের মির্জাকে দলীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছি। এইসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।’