বিএনপি সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচি থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করার যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, অতীতেও বিএনপি এই দাবিতে মাঠে নেমেছে, কিন্তু কিছুই করতে পারেনি।
বিএনপির হুঁশিয়ারিকে ‘তথাকথিত এক দফা’ আন্দোলন আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেছেন, তাদের এসব চেষ্টা জনবিচ্ছিন্নতায় মুখ থুবড়ে পড়বে।
শুক্রবার সকালে নিজ বাসভবনে এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখছিলেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন সুদূর পরাহত।’
আগের দিন বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান নেতারা। এর আগে রাজধানীর কর্মসূচিতেও একই ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়।
বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করে খালি হাতে ঘরে ফেরে ২০১৫ সালে। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনে সরকার পতনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে পড়ে। কিন্তু সেটি আর প্রত্যাহার করা হয়নি।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে যায় তারা। আর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করার পর আনে কারচুপির অভিযোগ। ওই নির্বাচনের ফলাফল না মেনে আন্দোলনের হুমকি দেয়া বিএনপি অবশ্য পরে সংসদে যোগও দেয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির একদফা আন্দোলনের জন্য কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছে। কিন্তু একদফাই বলুন, আর এগার দফাই বলুন, বিএনপির আন্দোলনের মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। তাদের একদফা আন্দোলনও জনবিচ্ছিন্নতায় মুখ থুবড়ে পরবে।
‘যে কোনো আন্দোলনে জনগণের বড় শক্তি জনগণ। জনগণই বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের অপরাজনীতির জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনমুখী রাজনীতির জন্যই বিএনপি ইস্যু খুঁজতে ব্যর্থ। নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে একযুগ কাটিয়ে দিয়েছে দলটি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন সুদূরপরাহত, তাই তাদের আন্দোলন দূর আকাশের নীলিমা, যা দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না।’
সরকারের বিরুদ্ধে দমন পীড়ণ ও কথা বলতে না দেয়ার বিষয়ে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছে, তাও খণ্ডন করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেছেন, সরকার যদি বাধাই দেবে, তাহলে বিএনপি কীভাবে বরিশালে বড় সমাবেশ করল?
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বৃহস্পতিবার দক্ষিণের বিভাগীয় এই শহরে ছয়টি সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে বিএনপির পরাজিত প্রার্থীরা অংশ নেন। তারা সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
সেই সমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের নেতা-কর্মীদেরকে কর্মসূচিতে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে।
কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছে, সরকার নাকি তাদের মাঠেই নামতে দিচ্ছে না। আবার এ অভিযোগ করছেন বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ থেকে। আমরা বলতে চাই, সরকার যদি না দিতে চাইত, তাহলে আপনারা সমাবেশ করলেন কীভাবে?’
তিনি বলেন, ‘তারা সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করল, ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত মিটিং মিছিল করছে, আর চিরাচারিত মিথ্যাচারের তুবড়ি বাজাচ্ছে। তাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না এ কথা বলে বেড়াচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায়ে, বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার নয়, বিএনপির রাজনীতিই এখন গভীর সমুদ্রে কম্পাসহীন নাবিকের মতো। বিএনপির মিথ্যাচারই তাদের রাজনীতিকে এখন গ্রাস করছে।
‘নেতাদের উপর কর্মীদের চরম আস্থাহীনতা। দলের গঠনতন্ত্র থেকে দুর্নীতিবাজদের অযোগ্যতা বিষয়ক ধারা বাতিল করে বিএনপি আজ আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দলে পরিণত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির প্রতি দেশের জনগণের আস্থা শতভাগ। সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপুল বিজয় তারই নজির।’
তিনি বলেন, ‘যে কোন জনঘনিষ্ট ইস্যুতে শেখ হাসিনা সরকার সবার আগে রেসপন্স করেন এবং আওয়ামী লীগও দেশের মানুষের সাথে আছে বলেই বিএনপি আন্দোলনের ইস্যু সংকটে পড়ছে। একবার এ ইস্যু আরেকবার ওই ইস্যু।