বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা মানে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলপন্থী ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম ওবায়ইদুল ইসলাম ।
তিনি বলেন, ‘শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘‘বীর উত্তম’' খেতাব দিয়েছিল মুজিব সরকার। তার কন্যা আজকে সরকারপ্রধান। বাবার দেয়া সেই খেতাব সরিয়ে নেয়া মানে বাবাকে অপমান করা। বাবা কি ভুল করছিলেন যে ভুল প্রধানমন্ত্রী সংশোধন করতে চাচ্ছেন ।'
তিনি বলেন, ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) যে ধরনের সুপারিশ করছে সেটি অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এটি বন্ধ না করলে এর পরিণতি শেখ হাসিনাকে বইতে হবে।'
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। জামুকার মাধ্যমে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বীর উত্তম প্রত্যাহারের সুপারিশের প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
মানববন্ধনে ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘শহিদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, এটি অবিসংবাদিত। প্রথমে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন নিজের পক্ষে, পরবর্তীতে শেখ মুজিবের পক্ষে। এটি দিবালোকের মতো সত্যি কথা।'
এ সময় তিনি সরকারের প্রতি সঠিক ইতিহাস রচনা করার আহবান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ দল আর বিএনপি ‘মুক্তিযুদ্ধের দল’। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় ছিলেন আর শহিদ জিয়া কোথায় ছিলেন সেটি সবাই জানে। সুতরাং যার যে অবদান সে অবদানকে স্বীকার করুন।
মানববন্ধনে সূচনা বক্তব্য দেন সাদা দলের যু্গ্ম আহবায়ক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড সিদ্দিকুর রহমান খান ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জামুকা কাজ করছে। আর এ দুটিই খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
২০০২ সালের যে আইনে জামুকা পরিচালিত হয়, সে আইনে জামুকার ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা উল্লেখ আছে । সে আইন অনুযায়ী জামুকা শহিদ জিয়ার খেতাব বাতিলের যে সুপারিশ করেছে, সেটির আইনগত এখতিয়ার তাদের নেই।'
‘আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জনদৃষ্টিকে অন্যত্র ডাইভার্ট করার একটি অপকৌশল হিসেবে এই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে’, বলেন এই অধ্যাপক ।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব কারো দয়ার দান নয়, এটা তার অর্জন। শেখ মুজিবুর রহমানের যেমন ইতিহাসে নির্ধারিত স্থান আছে, তেমনি জিয়াউর রহমানেরও ইতিহাসে নির্ধারিত স্থান আছে। কোনো অপচেষ্টা বাংলাদেশের মানুষের মনের অন্তস্তল থেকে শহিদ জিয়ার স্থান মুছে ফেলতে পারবে না।'
মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান বলেন, ‘১৯৭৫-এর প্রেক্ষাপট যারা তৈরি করেছিলো, সেই ব্যক্তিবর্গের অপতৎপরতা আবার শুরু হয়েছে।'
৭৫-এর প্রেক্ষাপট যারা সৃষ্টি করেছিলো, তারাই আজকে ক্ষমতাসীন দলের ভিতরে ঢুকে এই নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কি না সেটি প্রধানমন্ত্রীকে ভেবে দেখার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ফাঁদে পা দেবেন না। কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার অসম্মান করবেন না। জাতি এটি ভালোভাবে নেবে না কারণ এ দেশের ৯৯ ভাগ লোক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক। আশা করি সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের আহবায়ক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লুৎফুর রহমান বলেন, ‘জামুকার দায়িত্ব ছিলো এ দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা এবং তাদের পুনর্বাসন করা । মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব দেওয়া বা ছিনিয়ে নেয়ার এক্তিয়ার জামুকার নাই। এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব।'
তিনি বলেন, ‘সরকারের একজন মন্ত্রী অভিযোগ করেন, শহিদ জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।
‘এটি সঠিক নয়। যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কেউ কেউ এ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো বা পালাতে চেষ্টা করেছে তখন জিয়াউর রহমান গৃহবন্দি ছিলেন।'
জিয়াউর রহমানকে জানার জন্য নতুন প্রজন্ম জেগে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতির কারণে বিগত কয়েক বছরে নতুন প্রজন্ম যারা জিয়াউর রহমানকে কিছুটা ভুলতে বসেছিলো, সে প্রজন্ম আজ জিয়াউর রহমানকে জানার জন্য জেগে উঠেছে।
এ সময় তিনি জামুকার এই সুপারিশে কর্ণপাত না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান ।
সাদা দলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলামসহ অনেকে।
এ ছাড়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী আলফেছানি, অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন সম্রাট, অধ্যাপক নুরুল আমিনসহ অনেকে।