ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহমুদা বেগমের অডিও ও ভিডিও ক্লিপ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার সকালে নিজের সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আঞ্জুমান আরার পক্ষে ভোট চাইতে কয়েক দিন ধরেই এলাকায় আছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম।
শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে গত বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনি সভায় মাহমুদা ধানের শীষের সমর্থকদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভিডিওতে মাহমুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘সারা দেশে আজকে নৌকার জয়জয়কার, নৌকা ছাড়া কোনো কথা নাই…যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে প্রেম আছে, তারা ১৩ তারিখ ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন, তাদেরকে ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পর দেখতে চাই না ঠাকুরগাঁও পৌরসভায়…তাদের মুখ দেখতে চাই না…তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নাই, ভোটকেন্দ্রে যাবেন শুধু নৌকা, নৌকা, নৌকা…।’
এর আগের দিন আরেক পথসভায় মাহমুদা বলেন, ‘সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান, ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না… কোথায় যাবেন আমি জানি না। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না।’
মাহমুদার এমন বক্তব্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তার বক্তব্যের অডিও এবং ভিডিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কোনো অরাজনৈতিক বক্তব্য যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
দলের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যার যার খুশিমতো বক্তব্য কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না আওয়ামী লীগ।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর একটি অংশে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। ছবি: নিউজবাংলা
‘সুষ্ঠু হবে’ রোববারের ভোট
চতুর্থ ধাপে রোববার সারা দেশের ৫৭টি পৌরসভায় ভোট হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, আগের তিন ধাপের মতো এবারের ভোটও সুষ্ঠু হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক মূলবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগের তিন ধাপের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আগামীকালের নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে বরাবরের মতো আগামীকালও সক্রিয় থাকবে।’
গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিএনপিই কৃত্রিম বাধা তৈরি করছে বলে দাবি কাদেরের। বলেন, ‘বিএনপির একদিকে নির্বাচনবিমুখ রাজনীতি, অপরদিকে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখায় দেশের গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খাচ্ছে।’
সত্যিকারের ইতিহাসে বিএনপির ‘গাত্রদাহ’
নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারছে বলে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার করোর নেই।
সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এ উদ্যোগ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ সরকার ইচ্ছেমতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করছে।
বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে তাদের নেতৃত্বে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী অপশক্তি যেভাবে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে, তার বিপরীতে নতুন প্রজন্ম এখন সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারছে।
‘কারা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে সপরিবারে হত্যার বেনিফিশিয়ারি, কারা এদেশে খুনিদের বিচার চাওয়ার অধিকার হরণ করেছিল, তা নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে বলে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।’
কাদেরের ভাষায়, বিএনপি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির জনক। দলটি আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের পৃষ্ঠপোষক।