বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রচার বন্ধ হলে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেছেন, এখন আল জাজিরা বন্ধ করবেন, অনলাইনে পৃথিবীর মানুষ তো তা দেখবে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ প্রচারের পর থেকে এর পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশে সম্পাদকদের সংগঠনের একটি এডিটরস গিল্ড এই প্রতিবেদনটিকে ‘মন্দ সাংবাদিকতার’ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর অনলাইনে সংবাদটির প্রচার বন্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী।
তবে বিএনপি এই প্রতিবেদন নিয়ে ভীষণ উৎসাহী। সরকার প্রতিবেদনটিকে প্রত্যাখ্যান করে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে বিএনপি সন্তুষ্ট নয়। তারা দাবি করছে সরকারের আরও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে গয়েশ্বর কথা বলেন এ প্রসঙ্গে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করে ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর বলেন, আল জাজিরার বিষয়টা নিয়া এতটা... হওয়ার কথা না তো আপনাদের। আপনাদের হজমশক্তি তো কম না। অনেক কিছুই তো হজম করছেন। এটুকুও হজম করতে পারবেন।
তিনি বলেন, এটা তো অনেকগুলো ঘটনার একটা ঘটনা মাত্র। এটাতে এত মাথা খারাপ হওয়ার কী হলো? এসব গলাবাজি, চোপাবাজি, চাপাবাজি ছেড়ে সঠিকভাবে আপনিও এটাকে মোকাবিলা করেন। এবং প্রমাণ করে দেন আল জাজিরা যা বলছে তা সত্য না। এই কাজটুকু করতে এত কষ্ট কেন।
গয়েশ্বর বলেন, সংবাদপত্র বন্ধ করবেন আর মানুষের কান্না চেপে যাবে তা তো না। বিদ্রোহের আগুন বরং তাতে শক্তিশালী হবে। সামান্যতেই বিস্ফোরণ হবে।
‘ভেবেছিলাম জিয়াকে সংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগ’
স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর সংবর্ধনা দেবে বলেও ভেবেছিলেন গয়েশ্বর। বলেন, কারণ, জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের নেতৃত্বকে মেনে সবাইকে যুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বিএনপি নেতার দাবি, স্বাধীনতাযুদ্ধের অবদানের জন্য যে ৬৮জনকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান বাদে সবাই ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। একমাত্র জিয়াই বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে থেকে যুদ্ধ করেছেন।
তার দাবি, সবচেয়ে বেশি বীর উত্তম খেতাবও পেয়েছেন জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের যোদ্ধারা।
গয়েশ্বর আরও বলেন, দেশটা ভাষণে স্বাধীন হয় নাই, দেশটা যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে। সুতরাং যুদ্ধের অপর নাম জিয়াউর রহমান।
তার দাবি, এই যুদ্ধের সূচনা করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনিই সবার আগে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন ২৫ মার্চের রাত ২টা ২০ মিনিটে।
তিনি বলেন, জিয়াপাকিস্তানি সৈন্যদের গ্রেপ্তার করে, তাদের অস্ত্র নিয়ে পদযাত্রা করেছেন। তৎকালীন ইপিআর সদস্যদের নিয়ে মিছিল করে পাহাড়ের ওপর উঠে স্বাধীনতার প্রস্তুতি এবং পরের দিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ। এর আগেও কয়েকজন এই বেতারকেন্দ্র থেকে একই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন প্রথম সেনা কর্মকর্তা।
গয়েশ্বর বলেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের বিষয়টি অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির সামনে এসেছে। এতে জাতি বিব্রত। তার বীর উত্তম খেতাব বাতিলের বিষয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কিছু নেই। এটি ঐতিহাসিক দালিলিক সত্য।
প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান
একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বানও জানান গয়েশ্বর।
বলেন, একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আপনার ১৩ বছরের কর্মফল জনগণকে যাচাই করার সুযোগ দিন।
জনগণের কাছে জনগণের দেশটাকে ছেড়ে দেন। আপনার উন্নয়নে যদি জনগণ খুশি হয়ে আপনাকে আবার নির্বাচিত করে সেখানে অন্যদের কিছু বলার থাকবে না। সুতরাং আপনাকে থাকতেই হবে, আপনি না থাকলে দেশ বাঁচবে না, এমন ধারণা করাটা বোধহয় সঠিক না।
‘সংবিধান লঙ্ঘন করেননি জিয়া’
বিএনপির শাসনামলে একটি মামলায় হাইকোর্ট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামল এবং তার আমলে করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান জিয়াউর রহমান।
তার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করা হয়। সেই পঞ্চম সংশোধনীই উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে।
জিয়ার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করন নাই। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যম সংবিধান কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনীতে জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম এনেছেন। আওয়ামী লীগ সযত্নে তা পালন করছে। লালন করছে। তাহলে নিশ্চিত তিনি কোনো অপরাধ করেন নাই।
অন্য একটি মামলায় আরেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অষ্টম সংশোধনীও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সে বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এনেছেন। সেটাও তো তারা (আ. লীগ) সঠিকভাবে লালন করছেন পালন করছেন। তাহলে এখানে জনগণের মৌলিক অধিকারের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রুদ্ধ করে সংবাদপত্র বাতিল ও একদলীয় শাসনের মধ্য দিয়ে।
সুতরাং জিয়াউর রহমান সংবিধানের মৌলিক বিষয়কে আপহোল্ড করছেন। সকল স্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তিনি চালু করেছেন। সংবাদপত্র প্রকাশের অবাধ সুযোগ দিয়েছেন- বলেন গয়েশ্বর।