বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীর উত্তর খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের চার জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আটকের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
বিএনপি বলছে, বুধবার সন্ধ্যায় বিজয়নগর থেকে মিছিলটি কাকরাইল মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ অতর্কিত হামলা করে। এ সময় লাঠিপেটায় যুবদল নেতা গোলাম মওলা শাহীন, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক কাউসারসহ পাঁচ-ছয় জন নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ যুবদল নেতা শরীফসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
যদিও পল্টন থানার পরিদর্শক তদন্ত সেন্টু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিছিল থেকে আমাদের এখানে কোনো আটক নেই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মশালে আগুন ধরিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের মিছিলে হামলা করে।
মিছিলে রিজভী ছাড়াও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদল নেতা গোলাম মওলা শাহীনও উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বৈঠকে জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সহায়তা করায়।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে, তার একটির প্রধানও ছিলেন জিয়া। যুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নানা পটপরিক্রমায় জিয়াউর রহমান চলে আসেন রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।
১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর সামরিক আইন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন সে সময়ের মেজর জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই জিয়া হয়ে যান রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় এই ঘটনার সুফলভোগী জিয়াউর রহমানকে বিচারের মুখোমুখি না হতে হলেও তিনি খুনিদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত একাধিক খুনিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে। তাদের বিচার থেকে রক্ষা করতে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জিয়াউর রহমান সংবিধানের অংশ করতে সংবিধান সংশোধন করেন। এ কারণে ২১ বছর এই হত্যার বিচারও করা যায়নি।
জামুকা সদস্য সদস্য শাজাহান খান নিউজবাংলাকে বলেছেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনের মদতদাতা৷ তাই এই খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের প্ররোচনায় জামুকা জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি শেখ হাসিনার আদেশেই করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে।
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে থাকা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রবিরোধী বলেছেন।