ভারত থেকে আনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাই বিএনপি নেবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানান, টিকা নেবে না এমন কথা তারা কখনও বলেনি।
সম্প্রতি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে গৃহীত নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।
- আরও পড়ুন: বিএনপিকে ভ্যাকসিন দিয়ে মারতে চায় সরকার
বিএনপি কি করোনার টিকা নেবে? জবাবে দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমরা টিকা নেব না এটা কখনও বলিনি। টিকা নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছি। যার যখন সময় হবে তখন টিকা নেবে। আর এটা তো কেউ দান করতেছে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণকে সার্ভিস দেয়া। এটা একটা প্রসেসিং।’
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিকার প্রয়োগ চলছে। এসব টিকার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, রাশিয়ার স্পুতনিক ও চীনের সিনোভ্যাক। তবে বাংলাদেশে প্রয়োগ চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকা।
কোভিশিল্ডের ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে সরকার। এর মধ্যে হাতে এসেছে ৫০ লাখ ডোজ। এ ছাড়া, এই টিকার ২০ লাখ ডোজ উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
মোট ৭০ লাখ ডোজ হাতে নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশে এই টিকার গণপ্রয়োগ শুরু হয়েছে । টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে ক্রমাগত। গণটিকা প্রয়োগের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার টিকা নিয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
অথচ শুরু থেকেই ভারতের সিরাম থেকে আনা টিকার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। কোনো প্রমাণাদি না দিয়েই দলটির নেতারা বলেছেন, বেশি দামে ভারত থেকে টিকা কিনেছে সরকার।
দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনও বলেছেন, এই টিকা দিয়ে বিএনপিকে নিধন করতে চায় সরকার। যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভারতে উৎপাদিত টিকাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কিন্তু টিকা নিতে ক্রমেই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গণটিকা প্রয়োগের তৃতীয় দিন অনেক টিকাদান কেন্দ্রে দেখা গেছে, নিবন্ধনের জন্য ভিড় জমিয়েছে আগ্রহীরা।
বিএনপির সমালোচনা উপেক্ষা করেই সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে করোনার টিকা নিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। এবার করোনার টিকা নিয়ে নরম সুর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানেরও।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। এতে সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে আল জাজিরায় সম্প্রচারিত প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা হয়ে বলে জানান নজরুল ইসলাম।
উৎকণ্ঠা অবসানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা প্রকাশের যে দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তা এখনও না জানানোর নিন্দা জানিয়ে শিগগিরই দলের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবাদ ব্রিফিং অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাঁচ বছর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গত বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নড়াইলের একটি আদালত। এ ছাড়া সম্প্রতি কারাগারে পাঠানো হয়েছে দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদকে; মামলা হয়েছে প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচিত বিষয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম খান।
এসবের প্রতিবাদে স্থায়ী কমিটির সভায় আগামী বৃহস্পতিবার দেশের সকল মহানগর ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।
সভায় মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানান নজরুল ইসলাম। বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অঘোষিত এক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে থাকায় গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থার অসহনীয় যাতনার অভিজ্ঞতা থেকেই মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে বিএনপি একাত্ম।
সভায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে এখনও অক্ষম বাংলাদেশ সরকারকে এই ব্যাপারে আরও কৌশলী ও সক্রিয় হওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, দেশে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।