ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হয়েছিল চার বছর আগে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সঞ্জিত চন্দ্র দাস বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক হন।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে কমিটি দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও দেড় বছর আগে কমিটির মেয়াদ শেষের পরও তারা তা দিতে পারেননি। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় হল কমিটি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নানা অজুহাতে সেগুলো এড়িয়ে গেছেন সঞ্জিত-সাদ্দাম।
তবে এবার হল কমিটি দিতে প্রস্তুত বলে দাবি করেছেন সঞ্জিত। বলেন, ‘কমিটি করতে আমরা প্রস্তুত। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের হল খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন।’
বিষয়টির সত্যতাও মিলেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানের কথায়। ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায়, এই আপৎকালীন সময়ে এসবের (কমিটি) চেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা এগুলোর দিকে নজর দিব।’
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সঞ্জিত-সাদ্দাম কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে তারা আরও আট মাস সময় পেয়েছেন। কমিটি দেয়ার সদিচ্ছা থাকলে এর মধ্যেই তারা দিতে পারতেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি করলে এখন তাদের করোনার ঝামেলায় পড়তে হতো না।
ছাত্রলীগের দপ্তরবিষয়ক সাবেক উপসম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘নেতৃত্বে থাকার দীর্ঘমেয়াদি যে প্রয়াস, সেটি বাস্তবায়নের জন্যই তারা কালক্ষেপণ করেছেন এত দিন। আর এ জন্যই তারা হল কমিটি দেননি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির মেয়াদ এক বছর। মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হওয়ার পরও হল কমিটি দিতে না পারা চরম ব্যর্থতা।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই হল কমিটি হয়নি এত দিন। তারা পদপ্রত্যাশী এই ছেলেদের ব্যবহার করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছেন।’
২০১৫ সালের ১৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আবিদ আল হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এর দেড় বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়।
হল কমিটির শীর্ষ দুই নেতা দায়িত্ব পাওয়ার ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর পূর্ণ করা হয় হল কমিটি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ এক বছর। সে অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নভেম্বরে হল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান সঞ্জিত ও সাদ্দাম। তারা এক বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারলেও দিতে পারেননি ১৮ হলের কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হল কমিটিতে পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘ক্যাম্পাস রাজনীতিতে একটা নির্দিষ্ট বয়সের ব্যাপার থাকে। একটা ব্যাচের পর একেকটা ব্যাচ আসে। নেতৃত্বের পরিবর্তন হয় নিয়মিত।
‘কিন্তু সেখানে চার বছর ধরে নতুন কোনো নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। তৈরি হচ্ছে নেতৃত্বের একটি দীর্ঘসূত্রতা। এটি ছাত্রলীগের জন্য অশনিসংকেত।’
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও হল সংসদের ভিপি কামাল হোসেন জানান, তাদের মতো পদপ্রত্যাশী অনেকে করোনার মধ্যেও ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। নিজেরা রান্না করে খাচ্ছেন। ভাড়া বাসায় থাকছেন। মানসিক ও নানা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়েও তাদের যেতে হচ্ছে। এরপরও যদি কোনো প্রাপ্তি না আসে, এটি কর্মীদের জন্য হতাশাজনক।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের কর্মী তানভীর আলম চৌধুরী বলেন, হল কমিটি না থাকলে সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা চলে আসে। সাংগঠনিক গতিশীলতা হারিয়ে ফেলে। তাই দ্রুত হল কমিটি করে ছাত্রলীগে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হাজারও কর্মীর প্রত্যাশা।
নেতাকর্মীদের হতাশার যৌক্তিকতা রয়েছে বলে স্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কর্মীদের হতাশ হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে অবশ্যই এটি আমাদের স্বীকার করতে হবে।’
এরপরও কমিটি না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণ, বিশেষ করে করোনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের কারণেই মূলত হল কমিটি করা হয়নি।
‘কমিটি না হওয়ায় এটি নিয়ে আমাদেরও একধরনের অতৃপ্তি ও বেদনা আছে। খুব দ্রুতই যেন কমিটি করে হলগুলোতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রাণের সঞ্চার করতে পারি আমরা সে চেষ্টা করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত দাস বলেন, ‘ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের যখনই হল কমিটি করতে নির্দেশ দেবেন, তখনই কমিটি করতে আমরা প্রস্তুত।
‘আমরা তাদের বলেছি, হল না খুলে কমিটি দেয়ার কোনো ওয়ে (পথ) আছে কি না। তারা হল খোলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে বলছেন।’