বাংলাদেশকে নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তারা।
সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে আল জাজিরায় সম্প্রচার করা হয় ‘গ্যাং ক্লোজ টু বাংলাদেশ পিএম এক্সট্র্যাক্টস ব্রাইবস ফর স্টেট কন্ট্রাক্টস’ নামের প্রতিবেদনটি।
বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে বলে জানানো হয় সোমবার রাত দেড়টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, ‘নিউজটি বাংলাদেশ সরকারের গোচরীভূত হয়েছে, যা পুরোপুরি অসত্য, বানোয়াট ও মানহানিকর। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর দোসরদের অনুপ্রেরণায় সংবাদমাধ্যমটির এই প্রোপাগান্ডা, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’
মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও প্রতিবেদনটিকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ অভিহিত করা হয়।
‘সাম্প্রতিক সময়ে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে এটি মূলত তাদেরই কাজ। এই প্রতিবেদনের ধারা বর্ণনাকারী ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্ত। প্রতিবেদনে সামি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া জুলকারনাইন সায়ের খান মাদকাসক্তির কারণে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এরা দুইজন এবং নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল মিলে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে এই প্রতিবেদনের পেছনে কাজ করেছেন, যা স্পষ্ট।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটা পরিষ্কার নয়, কেন আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের সঙ্গে কাজ করছে, যাদের সুস্পষ্ট ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের টুকরো টুকরো ভিডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংযোগহীন নানা ঘটনা নেপথ্য কণ্ঠের মাধ্যমে একত্রে সম্পাদনা করা হয়েছে।’
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি টাকাটুকা খেয়ে এই নিউজ করেছে। তারা নাকি পেইড নিউজ করে থাকে। কাতার থেকে সম্প্রচার করা হলেও চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা হয় লন্ডন থেকে। এদের কাজই হলো মুসলমান দেশগুলোর ভুল খুঁজে খুঁজে বের করা। …আমরা তাদের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। এখন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছি।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইএসপিআর প্রদত্ত বিবৃতি জনমানসে সৃষ্ট উদ্বেগ নিরসনে সক্ষম হয়নি। স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
প্রতিবেদনে উত্থাপিত ঘটনাগুলোর সত্যনিষ্ঠ বিবরণ শ্বেতপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বাম জোটের নেতারা।
বিবৃতিতে সই করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) এর সাধারণ সম্পাদ মোবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউসিএলবির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) এর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক।