কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদনের পর সরকারের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে ‘বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা’ দাবি করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে দেশবাসী উদ্বিগ্ন জানিয়ে এই উদ্বেগের সঙ্গে একাত্মতাও জানিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার বিএনপির মুখপাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এ দেশের মানুষের সাথে বিএনপিও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সরকারের নিকট থেকে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’
সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে আল জাজিরায় সম্প্রচার করা হয় ‘গ্যাং ক্লোজ টু বাংলাদেশ পিএম এক্সট্র্যাক্টস ব্রাইবস ফর স্টেট কন্ট্রাক্টস’ নামের প্রতিবেদনটি।
বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে বলে জানানো হয় সোমবার রাত দেড়টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, ‘নিউজটি বাংলাদেশ সরকারের গোচরীভূত হয়েছে, যা পুরোপুরি অসত্য, বানোয়াট ও মানহানিকর। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর দোসরদের অনুপ্রেরণায় সংবাদমাধ্যমটির এই প্রোপাগান্ডা, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’
মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও প্রতিবেদনটিকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ অভিহিত করা হয়।
‘সাম্প্রতিক সময়ে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে এটি মূলত তাদেরই কাজ। এই প্রতিবেদনের ধারা বর্ণনাকারী ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্ত। প্রতিবেদনে সামি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া জুলকারনাইন সায়ের খান মাদকাসক্তির কারণে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এরা দুইজন এবং নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল মিলে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে এই প্রতিবেদনের পেছনে কাজ করেছেন, যা স্পষ্ট।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটা পরিষ্কার নয়, কেন আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের সঙ্গে কাজ করছে, যাদের সুস্পষ্ট ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের টুকরো টুকরো ভিডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংযোগহীন নানা ঘটনা নেপথ্য কণ্ঠের মাধ্যমে একত্রে সম্পাদনা করা হয়েছে।’
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি টাকাটুকা খেয়ে এই নিউজ করেছে। তারা নাকি পেইড নিউজ করে থাকে। কাতার থেকে সম্প্রচার করা হলেও চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা হয় লন্ডন থেকে। এদের কাজই হলো মুসলমান দেশগুলোর ভুল খুঁজে খুঁজে বের করা। …আমরা তাদের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। এখন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছি।’
রিজভী বলেন, আল জাজিরা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশের আপামর জনগণকে বিব্রত ও উৎকণ্ঠিত করেছে। জনগণের ওই অনুভূতির সাথে বিএনপিও গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি অভিযোগের প্রকৃত ব্যাখ্যা দেয়ার বদলে সরকার তার প্রতিবাদ বিবৃতিতে কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যের আড়ালে তা নাকচ করার চেষ্টা করেছে, যা জনগণকে আরও বেশি উদ্বিগ্ন করেছে ও প্রচারিত অভিযোগ সম্পর্কে তাদের উৎকণ্ঠাকে আরও ঘনীভূত করেছে।’