কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনকে কাতুকুতু বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেছেন, এসব ছোটখাট বিষয় দিয়ে কাজ হবে না।
মন্ত্রী বলেছেন, যে চক্রান্ত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে দেশের মানুষ সতর্ক আছে। এসব করে লাভ হবে না।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন হাছান, যিনি সরকারের মুখপাত্রের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের যুগ্ম, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে আল জাজিরায় সম্প্রচার করা হয় ‘গ্যাং ক্লোজ টু বাংলাদেশ পিএম এক্সট্র্যাক্টস ব্রাইবস ফর স্টেট কন্ট্রাক্টস’ নামের প্রতিবেদনটি।
এই প্রতিবেদনে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেদিনই এক বিবৃতিতে এই সংবাদকে ‘পুরোপুরি অসত্য, বানোয়াট ও মানহানিকর’ উল্লেখ করে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্র ও জনগণের প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর দোসরদের অনুপ্রেরণায় সংবাদমাধ্যমটির এই প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে।
পরদিন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও প্রতিবেদনটিকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ অভিহিত করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে এটি মূলত তাদেরই কাজ। এই প্রতিবেদনের ধারা বর্ণনাকারী ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্ত। প্রতিবেদনে সামি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া জুলকারনাইন সায়ের খান মাদকাসক্তির কারণে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এরা দুইজন এবং নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল মিলে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে এই প্রতিবেদনের পেছনে কাজ করেছেন, যা স্পষ্ট।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটা পরিষ্কার নয়, কেন আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের সঙ্গে কাজ করছে, যাদের সুস্পষ্ট ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের টুকরো টুকরো ভিডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংযোগহীন নানা ঘটনা নেপথ্য কণ্ঠের মাধ্যমে একত্রে সম্পাদনা করা হয়েছে।’
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি টাকাটুকা খেয়ে এই নিউজ করেছে। তারা নাকি পেইড নিউজ করে থাকে। কাতার থেকে সম্প্রচার করা হলেও চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা হয় লন্ডন থেকে। এদের কাজই হলো মুসলমান দেশগুলোর ভুল খুঁজে খুঁজে বের করা।… আমরা তাদের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি চক্র যারা সব সময় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, সেই চক্র এখন তাদের অর্থবিত্ত নিয়ে মানুষ ভাড়া করে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ সতর্ক আছে, সজাগ আছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সরকারের ভিত্তি তৃণমূলে পর্যন্ত শক্তিশালী। সুতরাং এই ছোটখাট কাতুকুতু দিয়ে লাভ হবে না।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার প্রশংসাও করেন হাছান। বলেন, ‘এই করোনাকালে পৃথিবীর সব দেশে যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি, সেখানে আমাদের পজিটিভ জিডিপি প্রবৃদ্ধি। এটি অনেকের সহ্য হচ্ছে না। সেই কারণে এখন নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। এই খেলা খেলে কোনও লাভ হবে না।’
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সমগ্র বিশ্বের কাছে প্রশংসিত দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিকে এখন সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ প্রশংসিত। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আজ ভারতের গণমাধ্যমে আলোচনা হয়।’
‘একুশের চেতনায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন।
সংগঠনটির উপদেষ্টা জাকির আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনায় এর সভাপতি জিন্নাত আলী খান জিন্নাহ, সহসভাপতি মেহেদী হাসান, হকার্স লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিমও বক্তব্য রাখেন।