চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৮ শতাংশ মানুষ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী।
আলোচিত এই নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারের দুই দিন পর শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বন্দরনগরীতে ভোট পড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি। রিজভীর দাবি, বাকি ৭৮ শতাংশ মানুষ ভোট না দিয়ে নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, ‘তারা দেখিয়েছে নির্বাচনে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তার মানে হচ্ছে, বন্দরনগরীর ৭৮ শতাংশের বেশি ভোটার বুধবারের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।’
বুধবার চট্টগ্রামে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, একজনের প্রাণহানি আর ভোটার খরার মধ্যে মেয়র পদে জয় পান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
নির্বাচনে ধানের শীষের তুলনায় বিজয়ী নৌকার ভোটের ব্যবধান হয়েছে অস্বাভাবিক বেশি। ধানের শীষের ৭.২২ গুণ ভোট পেয়েছে নৌকা। যত ভোট বৈধ হয়েছে, তার ৮২ দশমিক ৭ শতাংশই পড়েছে নৌকায়।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গঠনের পর ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। যদিও ভোটের ব্যবধান কখনও এবারের মতো এত বেশি ছিল না।
বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত ভোটের দিনই বলেছেন, সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।
বিএনপির অভিযোগ, তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ইভিএমে নৌকা মার্কায় বাটন চাপতে ভোটারদের বাধ্য করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
রিজভী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরও একটি নজিরবিহীন রক্তাক্ত নির্বাচন প্রত্যক্ষ করলো দেশবাসী। দিনভর সহিংসতা, খুনোখুনি, গোলাগুলি, ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ইভিএমের গোপনকক্ষে সরকারি ক্যাডারদের তাণ্ডব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ধানের শীষের প্রার্থীদের সকল এজেন্টকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ভোট ডাকাতির উৎসব করেছে আওয়ামী লীগ।’
ভোটের ফল প্রকাশে বিলম্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোট ডাকাতির ডিজিটাল মেশিন ইভিএমে ভোটাভুটি হলেও নির্বাচন শেষ হওয়ার ১০ ঘণ্টা পরে রাত পৌনে দু্ইটায় রিটার্নিং কর্মকর্তা গণভবন থেকে নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো ফলাফল ঘোষণা করেন। ইভিএমে ফলাফল দিতে সর্বোচ্চ এক-দুই ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তাদের তালার চাবিটিও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যখন ইচ্ছা যা মনে করেন সেটিই করেন। নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতো খাঁচার পাখিদের যা বলেন সেটিই তারা বাস্তবায়ন করেন।
চট্টগ্রামের নির্বাচনকে অনিয়মের মডেল আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার জনাব মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যও উদ্ধৃত করেন রিজভী। বলেন, ‘মানুষের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র ধ্বংসের বর্তমান সরকারের শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্ধারিত ব্যক্তিকে ‘মেয়র’ ঘোষণা দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা। নির্বাচন এখন শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা।’