ভারতে টাকা যাবে, কিন্তু টিকা আসবে না- এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এখন প্রশ্ন তুলছেন, যে দেশ তিস্তার পানি দেয় না তারা কেন টিকা দিল।
বিএনপি নেতার দাবি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকা নিরাপদ নয়।
সরকার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনার তিন কোটি টিকা কিনছে সিরাম থেকে। এরই মধ্যে প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা দেশে এসেছে। তার আগে এসেছে উপহার হিসেবে দেয়া ২০ লাখ টিকা।
জানুয়ারির শুরুতে সিরামের টিকা আসা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তখন রিজভী ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি বলেছিলেন, ভারতে টাকা যাবে কিন্তু টিকা আসবে না। তবে টিকা আসার পর এখন তিনি বলছেন, এই টিকা নিরাপদ নয়।
সোমবার রাজধানীর তেজঁগাওয়ে ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির এক আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ভারত তিস্তার পানি তো দেয় না, কিন্তু উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিল। এই দরদ উতলে উঠার কারণ কী?’
রিজভীর বলেন, ‘ভারত মূলত বাংলাদেশের মানুষদের ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাতে চায়। বাংলাদেশের সরকার ভারতকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।
‘ওরা (ভারত) দেখবে এই ভ্যাকসিন নেয়ার পরে মানুষ বাঁচে, না মরে, না অসুস্থ হয়। তারপরে ভিআইপিরা নেবে। তারপরে ভারত নেবে। ভারত বলছে, তারা মার্চে এটার ট্রায়াল করবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স বলেছে, ভারত যে টিকা বাংলাদেশকে দিচ্ছে এটা ট্রায়ালের জন্য দিচ্ছে।’
ভারতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকা শুরু হয়েছে। ছয় দিনে ১৬ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।
সেখানে দুটি টিকা দেয়া হচ্ছে, একটি হলো অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত সিরামের কোভিশিল্ড ও ভারতের নিজের উদ্ভাবিত কোভ্যাক্স।
বাংলাদেশে ভারত উপহার পাঠিয়েছে কোভিশিল্ড। পাশাপাশি কোভ্যাক্সের ট্রায়াল চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে। নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা সিনোভ্যাক্সের ট্রায়াল চালানোর প্রস্তাব এর আগে দিয়েছে চীনও। তবে বাংলাদেশ এখনও কাউকে অনুমতি দেয়নি।
রিজভী বলেন, ‘ভারতের হাই কমিশন বলছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই ভারতের বড় বন্ধু। অন্য কেউ না। যারা একটি দেশের একটি রাজনৈতিক দলকে বন্ধু মনে করে, তাদের দেয়া ভ্যাকসিন যদি দেশের জনগণ নেয় তাহলে মানুষ বাঁচবে কি বাঁচবে না, সেই গ্যারান্টি নাই।’
ভিভিআইপিদের আগে টিকা না দেয়ার সমালোচনাও করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এখানেই রহস্য। সরকার সাধারণ জনগণকে আগে ভ্যাকসিন দিয়ে এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে চায়। কারণ, দেশের মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যাথা নেই।’
সারা বিশ্বে করোনার যে টিকা প্রয়োগ হচ্ছে, উৎপাদক কোম্পানি তার দায় নিচ্ছে না। এটা বিশ্বে প্রথমবারের মতো ঘটেছে।
বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনার টিকা নেয়ার আগেই জনগণকে সম্মতিপত্রে সই করতে হবে।
এই প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রাখেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এই যে অঙ্গীকারনামা, সম্মতিপত্র এর থেকে প্রমাণিত হয় ভারত থেকে যে টিকা আসছে তার মধ্যে সন্দেহ আছে।
‘একটি গবেষণাগারে ব্যাং, বিড়াল যেমন বিচ্ছিন্ন করা হয়, তার ভেতরে যেমন দেখা হয় কী আছে, আজ ঠিক তেমনিভাবেই বাংলাদেশের মানুষ ভারতের গবেষণাগারের ব্যাং, বিড়ালে পরিণত হয়েছে। ওরা দেখবে, এই ভ্যাকসিন নেয়ার পরে মানুষ বাঁচে, না মরে, না অসুস্থ হয়।
‘গবেষণাগারে যেমন তেলাপোকাকে পরীক্ষা করা হয় তেমনি বাংলাদেশের মানুষের উপর টিকা দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’