খুন, গুমের পর সরকার এখন ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বিএনপিকে নিধন করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় আরাফাত রহমান কোকোর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি চাইলে আগে ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘হাছান মাহমুদ মিথ্যার যন্ত্রে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। মিথ্যার যন্ত্রে পরিণত হয়ে বলছেন, বিএনপিকে ভ্যাকসিন আগে দেবেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো, বিএনপিকে নিধন করা।
‘খুন, গুম দিয়ে বিএনপিকে নিধন করার চেষ্টা করেছিল। এখন ভ্যাকসিনের নিরাপত্তার জন্য বিএনপিকে আগে দিয়ে নিধন করার চেষ্টা করছে। এ সরকার মানুষের মরা-বাঁচা নিয়েও তিরস্কার শুরু করেছে।’
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনা প্রতিরোধী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনছে বাংলাদেশ। উপহার হিসেবে এই টিকার ২০ লাখ ডোজ এরই মধ্যে ঢাকায় পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এছাড়া আরও তিন কোটি টিকা কিনছে বাংলাদেশ।
বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্য থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে দেয়া হবে টিকা। দেশব্যাপী টিকা দেয়া শুরু হবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে।
বিশ্বের অনেক দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজটি নিয়েছেন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশেও তা হচ্ছে না। সরকার মনে করছে, করোনা মোকাবিলায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, টিকা প্রদানে তাদেরই অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
এতে আপত্তি বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা রিজভীর। বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার জনগণের সাথে তামাশা শুরু করেছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন আগে নিলে অসুবিধা কোথায়।’
কোনো তথ্য উপাত্ত না তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘ভারতে ভ্যাকসিন দিয়ে অনেকে মারা গেছে। এ জন্য আমরা বলেছিলাম, ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা প্রমাণের জন্য ক্ষমতাসীনদের আগে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সবার আগে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন এবং ডাক্তার ফাউসচিও আগে নিয়েছিলেন। তাতে করে ভ্যাকসিনের প্রতি মার্কিনিদের আস্থা ফিরেছে, ভীতি দূর হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন আগে নিলে অসুবিধা কোথায়? তাঁরা আগে ভ্যাকসিন নিলে এই ভ্যাকসিনের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।’
করোনার টিকা নিয়ে বিএনপির এই অবস্থান তাদের শুরুর দিকের বক্তব্যের বিপরীত। করোনার টিকা আনতে সরকার যখন চুক্তি করেছিল, তখন ফেসবুকে একটি ভুয়া তালিকা ভাইরাল হয়। তাতে দাবি করা হয়, করোনার প্রথম দুই লাখ টিকা রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা পাবেন।
গত ৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রাখেন, কেন আগে সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে ভিভিআইপিদেরকে দেয়া হবে?
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেন রিজভী।
২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় মারা যান কোকো। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালে তিনি বিদেশে চলে যান। এরপর আর দেশে ফেরেননি।