নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণের দাবিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ডাকা হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার এই হরতাল ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। জানিয়েছিলেন রোববার আধা বেলা কর্মসূচি পালন করবেন তিনি। তবে বড় ভাইয়ের নির্দেশে তবে সে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান হরতাল প্রত্যাহারের তথ্যটি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে এই হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদেরের বরাত দিয়ে তিনি করেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল দাবি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। পরবর্তী এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে আবদুল কাদের মির্জার বিরোধের শুরু সদ্য সমাপ্ত বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে।
ভোটের আগে কাদের মির্জা বারবার বলেছিলেন আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গোলমাল করার চেষ্টা করছে।
বসুরহাট পৌরসভায় নির্বাচনের সময় কাদের মির্জার নানা বক্তব্য রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে। কাদের মির্জার দাবি, বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের এমপিরা সন্ত্রাসী পালেন, ছোট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘুষ নেন, তাদের মদের আসরে পুলিশ গিয়ে স্যালুট দেয়।
শুরুর দিকে মির্জা কাদের কারও নাম না বললেও ১৬ জানুয়ারি ভোট শেষে তিনি স্পষ্টতই বলেন, নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ভোটে জয়ের দুই দিন পর এক সভায় নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য একরামুলের নামে সরাসরি অভিযোগ করেন তিনি। সভায় কাদের মির্জা বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে (একরামুল) খোদা মানে। প্রশাসনের এ তেল মারা বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনের দুর্নীতির বিচারও করতে হবে।’
করামুল এতদিন মুখ খোলেননি। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি ২৭ সেকেন্ড কথা বলেন। তবে পরে আবার সে ভিডিও ডিলিটও করে দেন। যদিও তা এর আগেই ভাইরাল হয়ে যায়। কপি করে নানা পেজে উঠে যায় ভিডিওটি।
ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি কথা বললে তো মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলব না, আমি কথা বলব ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। একটা রাজাকার ফ্যামিলির লোক এই পর্যায়ে আসছে; তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কথা বলব। আমার নাম যদি জেলা কমিটিতে না আসে তাহলে আমি এটা নিয়ে শুরু করব।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে একরামুল মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ভিডিও সরিয়ে নিলেও তিনি ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য।
তবে ওবায়দুল কাদের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এটাও স্পষ্ট করেন তিনি।
তাহলে কার কথা বলেছেন- এমন প্রশ্নে একরামুল বলেন, ‘আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা খবর নিলে জানতে পারবেন তার পরিবারে কারা রাজাকার ছিল।’
এই বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে কাদের মির্জার নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় কোম্পানীগঞ্জে। সেখানে একরামুলকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এর মধ্যে একরামুল আবার লাইভে এসে বলেন, ‘আমরা ভালোবাসি শেখ হাসিনাকে। তার উন্নয়ন যদি ধরে রাখতে হয়, গুতাগুতি আর না।’
বিরোধ মেটাতে মধ্যস্ততাও কামনা করেন একরামুল। বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যদি কোনো গ্যাপ থাকে আমাদের নেতারা ডেকে মিনিমাইজ করে দেবেন।’