পত্রিকায় মতামত কলামে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের কথা বলে সিপিবি থেকে অপাংক্তেয় বর্ষীয়ান রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খান মেনে নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত।
তবে তিনি মনে করেন, সরকারের ব্যর্থতা যেমন আছে, সাফল্যও আছে অনেক।
সিপিবির সাবেক সভাপতি তার বিরুদ্ধে দলের সিদ্ধান্তের যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে এটা করা হয়েছে।আরও পড়ুন: সরকারের প্রশংসা করে নিজ দলে রোষানলে মনজুরুল
তবে মতামত কলামে সেই লেখায় তিনি যা উল্লেখ করেছিলেন, সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন মনজুরুল। বলেন, ‘হাসিনার তো অবশ্যই সাফল্য আছে। পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, দরিদ্র মানুষকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করা, এটা তার বিরাট কৃতিত্ব।’
মনজুরুলের চোখে সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতাও আছে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি চলছে, এখনও সাম্প্রদায়িক শক্তি, উগ্রবাদী শক্তি নানা রকম পাঁয়তারা চালাচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম একটা ষড়যন্ত্র করছে। এইসব বিষয় চলছে, এটা মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে।’
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিস্তর অভিযোগ আছে মনজুরুলের। বলেন, ‘একটা নির্বাচন হয়েছে, সেখানে জনগণ ভোট দিতে পারেনি, পুলিশ প্রশাসন রাতে ভোট দিয়ে নির্বাচনকে হাস্যকর করে দিয়েছে। আসলে নির্বাচন ব্যবস্থাকেই বানচাল করে দিয়েছে। এই অবস্থাগুলোই তো খারাপ। তার মানেই এই নয় যে, তাদের কোনো সাফল্য নাই।’
সিপিবির কোনো কোনো নেতা সরকারকে ফ্যাসিস্ট মনে করেন জানিয়ে তার সঙ্গেও একমত নন বলে জানিয়েছেন মনজুরুল।
তিনি বলেন, ‘আমি বলি যে, সরকারের এই কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিজম বলা ঠিক হবে না।
‘বামপন্থিদের অনেকেই, এমনকি আমাদের পার্টির মধ্যে অনেকেই ফ্যাসিজম বলে অভিহিত করতে চায়। কিন্তু ফ্যাসিজমের তো একটা সংজ্ঞা আছে। আমি বলতে পারি বর্তমান সরকারের মধ্যে স্বৈরাচারি প্রবণতা তৈরি হয়েছে।’
মনজুরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আরেকটি কারণ, তিনি দৈনিক আমাদের সময়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
পদ্মাসেতুর মতো প্রকল্প বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্য বলে মনে করেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। ছবি: নিউজবাংলানিউজবাংলার সঙ্গে কথোপকথনেও এই প্রসঙ্গ আবার তোলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক হতে হবে। যারা নানানভাবে দেশি বিদেশি মদদ নিয়ে দেশের ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে সতর্ক থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দৈনিকে আমাদের সময় পত্রিকায় এই বামপন্থি নেতা মন্তব্য কলাম লিখেছিলেন যাতে তিনি পাকিস্তান আমলে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম তুলে ধরে একেবারে শেষের দিকে বর্তমান সরকার নিয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখেন।
লেখাটি ছিল এমন: ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যমুনা সেতু ও পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। দেশ ক্রমেই উন্নত দেশের পর্যায়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর মানচিত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।’
তবে সিপিবির এটা পছন্দ হয়নি। প্রথমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, এটা ব্যক্তিগত মত, দলের নয়। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মনজুরুলকে ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।
দলের সিদ্ধান্তে দ্বিমত নেই
৬০ এর দশকে ছাত্র থাকা অবস্থায় বামপন্থায় দীক্ষা নেয়া মনজুরুল আহসান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওটা আমাদের পার্টির লাইনের বিরুদ্ধে গেছে। আসলে আমি একটা লেখা দিয়েছিলাম নাগরিক নামে একটা পত্রিকা, যেটা আমেরিকা থেকে অনলাইনে প্রকাশ হয়। সে লেখায় শেষ প্যারায় একটা ভুল ছিল। পরে খেয়াল হওয়ায় সেটা আমি সংশোধন করে দেই। পরে তারা সংশোধন করেই ছেপেছে।
‘কিন্তু একই লেখা আমি আমাদের সময়কে দিয়েছিলাম, সেখানে আমি সংশোধন পাঠানোর আগেই লেখাটি ছেপে ফেলে। এর ফলে কনফিউশনটা সৃষ্টি হয়। যে কথাগুলো ছিল তা পার্টি লাইনের বিরুদ্ধে। সে জন্য ওরা একটা নিন্দা জানিয়েছে।‘
এই সিদ্ধান্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কি না- এমন প্রশ্নে মনজুরুল বলেন, ‘আমি পার্টির একজন নেতা হয়ে পাবলিকলি বলতে পারি না। তাহলে তো আর পার্টির থাকে না। এটা কোন পার্টিতেই এটার সুযোগ দেয় না।
‘তারপরও আমাদের এখানে ছোটখাট বিষয় নিয়ে লেখালেখি হয়। অন্য পার্টিতে সেটাও করে না। তাহলে তো সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার এই লেখাটার জন্য আমার পদটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে। কিন্তু আমি নিজে বলেছি এটা শিরোধার্য।
‘আমি পার্টির একজন দীর্ঘদিনের নেতা। এটা তো একজন মানুষের মধ্যে কনফিউশন তৈরি করে। সেটা দূর করার জন্য পার্টি থেকে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্যরা যাতে না করে। কেন না তাহলে তো পার্টির মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না।’