দুর্নীতি করতে সরকার করোনাভাইরাসের টিকা আমদানিতে ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘ভ্যাকসিন সরকার সরাসরি না কিনে মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতির জন্যে। এর মাধ্যমে জনগণের অর্থ নয়-ছয় করে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী পদবিধারী মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ নিয়ে নীতিগতভাবেই শুধু নয়, আইনগতভাবেও অপরাধমূলক একটা কাজ হয়েছে।
‘জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগকৃত কোনো ব্যক্তি যিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা তার এই (ভ্যাকসিন ক্রয়) সম্পৃক্ততা বেআইনি ও অপরাধমূলক।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আসবে বাংলাদেশে। টিকার ৩ কোটি ডোজ আনতে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টিকার জন্য এরই মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা সিরামকে পাঠানো হয়েছে।
টিকার আমদানি প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগণের এই টিকাপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভ্যাকসিন কবে আসবে, এটা নিয়ে গোটা জাতির সঙ্গে আমরাও চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত তারা (সরকার) কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করতে পারেনি।
‘এখন পর্যন্ত ভারত থেকে যে করা হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা আমরা পাইনি। কারণ ভারতের হাই কমিশনার বলেছেন, ভারতের চাহিদা মেটানো হবে। তারপরে তারা নির্ধারণ করবেন। তাদের পররাষ্ট্র সচিবও একই কথা বলছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি যে, শ্রীলঙ্কার সাথে তারা চুক্তি করেছেন যে, শ্রীলঙ্কাকে তারা আগে অগ্রাধিকার দেবেন। এই বিষয়গুলো অস্পষ্ট এবং এটা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের মানুষকে আবার প্রতারণার শিকার করা হচ্ছে।’
গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, টিকা রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই।
ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘গতকাল আমাদের স্বাস্থ্যসচিব বিষয়টি জনসম্মুখে বলেছেন। টিকা ইস্যুতে আমাদের দেশের তিনটি মন্ত্রণালয় সংযুক্ত স্বাস্থ্য, বাণিজ্য এবং ফার্মাসিটিক্যালস মন্ত্রণালয়। এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের কোনোটি টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোনো কথা বলেনি। আমি জানি না কীভাবে এই কথাটি ছড়িয়ে গেল?’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিষয়টিকে আর কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি আমি জানি না। আমি শুধু বলতে চাই, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।’
সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘ভ্যাকসিনটা হচ্ছে জীবন রক্ষার করার একট বিষয়। এটা একটা অগ্রাধিকার। সেই ভ্যাকসিন নিয়েও তারা দুর্নীতি করছে যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি।
‘এই সরকার যে পুরোপুরিভাবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন সরকার এবং জনগণের প্রতি যে তাদের কোনো রকম দায়-দায়িত্ব নেই, সেটাই এখানে প্রমাণিত হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘টিকা আমদানির দায়িত্ব শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারী বির্তকিত বেক্সিমকো গ্রুপকে প্রদানের সিদ্ধান্তে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’