বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পৌর নির্বাচনে প্রার্থী পাচ্ছে না ‘বিকল্পশক্তি’ জাপা

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:৪৩

‘কেউ প্রার্থী হননি, তাই আমরা দেইনি। নির্বাচন কেউ করতে চাননি। এখন কি আমরা জোর করে প্রার্থী দেব?’ সান্তাহারে সংসদ সদস্য থাকার পরও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ার বিষয়ে বললেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নূরুল ইসলাম ওমর।

এরশাদ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টি যেসব সংসদীয় আসন এখনও ধরে রেখেছে তার একটি কুড়িগ্রাম সদর। তবে এবার পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী পায়নি দলটি।

ভোটে লড়াই না করার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক সদস্য সচিব রেজাউল করিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আসলে আমাদের আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীর সমস্যা ছিল। আমরা আগ্রহী প্রার্থীই পাচ্ছিলাম না। নির্বাচনে দাঁড়াতে কেউ আগ্রহী ছিল না।’

সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরের বদরগঞ্জ অবশ্য হাতছাড়া হয়ে গেছে আগেই। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে কেবল সদর ও গঙ্গাচড়া আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে।

গত ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে এই বদরগঞ্জেও প্রার্থী ছিল না জাতীয় পার্টির।

রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের যারা প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, তারা জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন না। এ কারণে আমরা ওখানে প্রার্থী দেইনি।’

রংপুরে এই অবস্থা কেন হলো আপনাদের- এমন প্রশ্নে জাপা নেতা বলেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু কোন্দল আছে, ওখানে দুইটা গ্রুপ আছে। এটাও একটা সমস্যা।’

পৌর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংকটের বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক নানা বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি বেমানান।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত দুই মাসে যতগুলো আলোচনায় বক্তব্য রেখেছেন, সবগুলোতে তার দাবি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে জনগণ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে চায়।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে উল্টো কথা।

সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২৪টি আসনের মধ্যে নীলফামারী জেলা ছাড়া সব আসন ধরে রাখে জাতীয় পার্টি।

তবে ১৯৯৬ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ আসনগুলো দখলে নিতে শুরু করে। মাঝে জামায়াতে ইসলামীও নীলফামারীর একটি আসনে দুইবার জিতেছে। তবে গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে এই জেলার দুটি আসন জিতেছে জাতীয় পার্টি।

এখন রংপুরে দুটি, কুড়িগ্রামে একটি, গাইবান্ধায় একটি এবং লালমনিরহাটে একটি আসন আছে জাতীয় পার্টির।

কুড়িগ্রামে চারটি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির দখলে কেবল সদর আসন।

বৃহত্তর রংপুরেরই যখন শক্তি ক্ষয়িষ্ণু, তখন অন্য এলাকাতেও পরিস্থিতি উল্টো হওয়ার কথা নয়। হয়েছে তাই। কুমিল্লা-১১ আসনে দলের ভোট এখন নগণ্য, কিশোরগঞ্জ সদর আসনেও প্রার্থী থাকে না, আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জিততে হয় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে। বৃহত্তর সিলেটেও এখন নিজের শক্তিতে জিতে আসা দলটির জন্য কঠিন।

জাতীয় পার্টিতে নেতার অভাব নেই। সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের আকার ঢাউস, সদস্য সংখ্যা ৪১ জন।

সংসদ নির্বাচন এলেই তারা শতাধিক আসন দাবি করে আওয়ামী লীগের কাছে। কিন্তু তিন দফায় ১৫০টি পৌরসভায় তারা ৫০ জন নেতাও পেলেন না, যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম নিউজবাংলাকে জানান, পৌরসভা নির্বাচনে তিন ধাপে তারা ৩২ জন মেয়র প্রার্থী দিয়েছেন।

গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল চারটিতে। তারা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে তৈয়ব আলী, সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে মোক্তার হোসেন, নেত্রকোণার মদনে ক্ষুদিরাম দাস, সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভায় অনন্ত মল্লিক।

এদের মধ্যে তৈয়ব ভোট পেয়েছেন ৪২২টি। মোক্তারের ভোট ২৩৮, ক্ষুদিরাম দাসের ১১৫ এবং অনন্ত মল্লিক ভোট পান ৩৯৭টি। এদের সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ৬১ পৌরসভায় ভোট আগামী ১৬ জানুয়ারি। প্রথম ধাপের তুলনায় এবার লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী বেশি। ১৪টিতে লড়াই করছে দল।

প্রার্থীরা হলেন: শরীয়তপুরে সাহিদ সরকার, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আব্দুর রশিদ রেজা, নীলফামারীর সৈয়দপুরে সিদ্দিকুল আলম, দিনাজপুর পৌরসভায় আহমেদ শফি রুবেল, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে নুরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের তারাবে জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, বান্দরবানের লামায় এ টি এম শহীদুল ইসলাম, মাগুরায় হাসান সিরাজ, খাগড়াছড়িতে ফিরোজ আহমেদ, ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় বিনোদ বিহারী ভৌমিক, নাটোর গুরুদাসপুরে রায়হান শাহ, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আব্দুর রহমান মিয়া, ঝিনাইদাহের শৈলকূপায় আবু জাফর ও সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জে আনোয়ার হোসেন আকন্দ।

এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, নাগেশ্বরী ছাড়া আর কোথাও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা নেই। এমনকি ভোটের প্রচারেও খুব বেশি নেই তারা।

তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪ পৌরসভার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর আছে ১২টিতে। এদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ কটিয়াদীতে আলাউদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী জলঢাকায় আফরোজা পারভীন, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নীরব ব্যাপারী, বরগুনায় আব্দুল জলিল হাওলাদার, নওগাঁয় ইফতারুল ইসলাম বকুল, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মোহাম্মদ মহসিন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় আবু জাফর মুহাম্মদ নাসিম, সিলেটের জকিগঞ্জে আব্দুল মালেক ফারুক, সিলেটের গোলাপগঞ্জে জমির উদ্দিন আহমেদ, ফেনী সদরে ইয়াসিন হাসান ইমন, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সাহাব উদ্দিন ও কুমিল্লার লাকসামে আবদুল হান্নানকে লাঙ্গল তুলে দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

এসব এলাকার মধ্যে জলঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও জাতীয় পার্টির শক্তি নেই বললেই চলে।

প্রথম ধাপে পঞ্চগড় পৌরসভায় প্রার্থী না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল করিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে নির্বাচনে জিতে আসার জন্য প্রার্থী আমাদের ছিল না। নির্বাচনে আগ্রহী ছিল না কেউ। একারণে মনোনয়ন দেইনি।’দ্বিতীয় ধাপে বগুড়ার শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার পৌরসভায় প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি।

সান্তাহারের (বগুড়া-৩) সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার। সংসদ সদস্য থাকার পরেও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী নেই কেন- জানতে চাইলে বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নূরুল ইসলাম ওমর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ প্রার্থী হননি, তাই আমরা দেইনি। নির্বাচন কেউ করতে চাননি। এখন কি আমরা জোর করে প্রার্থী দেব?’ বাকি পৌরসভাগুলোতে প্রার্থী না দেয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না। আর আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে। এ বিষয়ে পার্টির মুখপাত্র হিসেবে চেয়ারম্যান, মহাসচিব যাকে অথরাইজ করেছেন শুধু তিনি বলবেন।‘

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই আমাদের প্রার্থী সংকট রয়েছে। এ কারণে নির্বাচনে যারা সম্ভব্য প্রার্থী হতে পারত, তারা এগিয়ে আসছে না।

‘আমাদের প্রার্থী হতে ইচ্ছুকের অভাব নেই। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী না আসার কারণ হলো তাদের কোনো আস্থা নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর