পূর্বঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আটটি ইউনিয়ন শাখা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, একইদিন টাকার বিনিময়ে নতুন পকেট কমিটিও ঘোষণা করে গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। এসব কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই ছাত্রদলকর্মী। আছে ধর্ষণ ও মাদক মামলার আসামির মতো বিতর্কিতরা। এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা; তোপের মুখে গা ঢাকা দিয়েছেন কমিটি অনুমোদনকারী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোলায়মান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ রুবেল।
এসব কমিটি করার পেছনে ‘পদ বাণিজ্যের’ অভিযোগ তুলেছে খোদ জেলা ছাত্রলীগ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলকর্মীদের কাছে পদ বিক্রি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণও পেয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল। সে সময়ে তাদের প্রতি জেলা ছাত্রলীগ নেতারা নমনীয় ছিল। এবার অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুপারিশ করবেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের আরেক নেতা জানান, তাদের এ রকম কাণ্ডে জেলা ছাত্রলীগ বিব্রত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ সংক্রান্ত আলোচনায় সরগরম। ছাত্রদলকর্মীরাও বলছেন কটূ কথা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্বঘোষণা ছাড়াই ৪ জানুয়ারি গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোলায়মান ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল আটটি ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন কমিটি গঠন করেন। এর আগে কোনো সম্মেলন, সাক্ষাৎকার, সিভি জমা নেয়া বা খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে দেয়া হয় নতুন কমিটি। এসব কমিটির জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা নেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে চিহ্নিত ছাত্রদলকর্মী ও বিতর্কিতদের।
গজারিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে আমিনুল ইসলাম শুভকে। সক্রিয় এই ছাত্রদলকর্মী কিছু দিন আগেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে রিয়াদ আহম্মেদ জুয়েল নামে এক জনকে, যিনি একটি ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি।
গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ছাত্রদলকর্মী শেখ শাকিলকে এবং হোসেন্দী ইউনিয়ন কমিটির সহ-সভাপতি করা হয়েছে ছাত্রদলকর্মী রাকিবুল ইসলামকে।
এ ছাড়া অন্তত চার ইউনিয়ন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন ছাত্রদলকর্মীরা। বাকি যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন মাদক মামলার আসামি, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ও অছাত্র।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তারা। বিতর্কিতদের বহিষ্কার দাবিতে গত তিন দিন ধরে আন্দোলন করছেন সদ্যসাবেক কমিটির নেতারা। উপজেলা ছাত্রলীগ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান এবং সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় তাদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।
বাউশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি জোবায়ের জাহাঙ্গীর ও ভবেরচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বেলাল ভূঁইয়া জানান, বিতর্কিত ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার দাবিতে দুয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগকে স্মারকলিপি দেয়া হবে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল তৈরি পোশাক শিল্পের মালামাল চুরির দায়ে কয়েকদিন আগে সাভারের আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তার তথ্যমতে উদ্ধার করা হয় চোরাই মালামাল।
মামলায় কয়েক দিন জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহনে ডাকাতি, চাঁদা আদায়, জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর কমিটির সভাপতি সোলায়মান রাজনীতিতে একেবারে নিষ্ক্রিয়। বিয়ে করে পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকছেন তিনি।