আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জা দাবি করেছেন, তার বক্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমপিরা পালানোর দরজাও খুঁজে পাবে না’- এমন বক্তব্য দিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় আছেন তিনি। আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র বৃহত্তম নোয়াখালীর আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে নানা অনিয়মের কথা বলেছিলাম। জাতীয় ইস্যুতে আমি কোন বক্তব্য রাখিনি।’

গণমাধ্যমে মঙ্গলবার পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে কাদেরের ভাই কেন আন্দোলনে

‘সাম্প্রতিক সময়ে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন সভায় দেয়া আমার বক্তব্য নিয়ে একটি কুচক্রিমহল নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। নির্বাচন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মানুষের মাঝে। আমি শুধুমাত্র একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় বসুররহাট পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, এ জন্য নানা নির্বাচনি কর্মসূচিতে আমি কথাগুলো বলছি।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদেরের বক্তব্য কয়েকদিন ধরেই ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার বক্তব্য নিয়ে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও।

সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করে না বলে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছে, তার মধ্যে আব্দুল কাদের মির্জার অভিযোগ বিরোধী দলটির নেতাদেরকে বক্তব্য দানে আরও সুযোগ করে দিয়েছে। সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যে অভিযোগ করে আসছিলেন, তার প্রমাণ করে দিয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ভাই নিজেই।আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ে মুগ্ধ রিজভী

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমপিরা পালানোর দরজাও খুঁজে পাবে না’- আবদুল কাদের মির্জার এমন মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফও।

মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় এক অনুষ্ঠানে হানিফ বলেন, ‘এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তিনি (আব্দুল কাদের) ক্ষোভের সঙ্গে এই কথা বলেছেন। তার এ বক্তব্য সামগ্রিক চিত্র নয়। রাজনীতির মাঠের চিত্রও এমন নয়। কোনো এমপিই পালাবে না।’

কুষ্টিয়ায় ডায়াবেটিক হাসপাতালের বর্ধিত অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ছবি: নিউজবাংলা

এর মধ্যেই গণমাধ্যমে আব্দুল কাদের মির্জার এ বিবৃতি এল। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘বিগত একযুগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে সে বিষয়গুলোও আমার বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলাম। বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন যারা বলেন- উমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে।

‘সত্যি কথা হলো সাধারণ মানুষ বলে শেখ হাসিনা একলা কি করবেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণে বৃহত্তর নোয়াখালীতে বিএনপির দুর্গ ভেঙে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যমে সেগুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্যের খণ্ড অংশ বিশেষ প্রকাশ করেছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ সকল মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ ছাড়াও সমুদ্র সীমানা বিজয়, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, স্থল বন্দর স্থাপন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, রেসিটেন্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি, বড় বড় শহরগুলোতে ও জেলায় ফোর লেন নির্মাণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সার্বিকভাবে জাতীয় প্রবৃত্তি বৃদ্ধি, বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ করোনাকালীন সময়ে দুযোগ মোকাবিলা করে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার মানষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।’

আব্দুল কাদেরের দাবি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজ নির্বাচনি এলাকা ছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালীর উন্নয়ন ও জাতীয় সারাদেশে উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন কাদের মির্জার সমর্থক ও নেতাকর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের টানা তিন বারের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ৩ জানুয়ারি নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দিনভর তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করে। সড়কে আগুন ধরিয়ে করা হয়েছে অবরোধ। আব্দুল কাদের নিজেও অংশ নিয়েছেন সেই কর্মসূচিতে। এই অবস্থায় নোয়াখালী তো বটেই, বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।